জার্মানিতে যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার নারীর সংখ্যা বাড়ছে


নারী অধিকার বিষয়ক সংগঠন 'ট্যঁর দ্যে ফ্যাম' জানিয়েছে, যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার ৬৫,০০০ নারী বর্তমানে জার্মানিতে অবস্থান করছেন। ডয়চে ভেলের কেট ব্র্যাডি এক সোমালি নারীর সঙ্গে দেখা করেছেন, যিনি এই বর্বর চর্চার ইতি কামনা করেছেন।''আমার বয়স তখন বারো বা তের। বেশ কয়েকজন আমাকে চেপে ধরেছিল। তারপর আমার ওটা কেটে ফেলে। এরপর আমাকে একটি টেবিলের উপর শুইয়ে রাখে। সেদিনের ছবি এখনো আমার চোখে ভাসে। আমি প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছিলাম। এরপর তারা সেখানে সেলাই করে এবং আমার দুই পা একসঙ্গে একমাসের জন্য বেঁধে রাখে যাতে ক্ষত শুকিয়ে যায়।'' বিশ্বের যেসব দেশে নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ বা এফজিএম এখনো চালু আছে, সেসব দেশ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানিতে নারীর আগমন বেড়ে যাওয়ায় এখানে এমন চর্চার শিকার নারীর সংখ্যা বেড়ে গেছে বলে মনে করছে নারী অধিকার বিষয়ক সংগঠন 'ট্যঁর দ্যে ফ্যাম'।

সংঠনটির হিসেব অনুযায়ী, জার্মানিতে বর্তমানে এমন নারীর সংখ্যা ৬৫,০০০-এর মতো, গত বছরের তুলনায় যা ১২ শতাংশ বেশি। ৩০ বছর বয়সি ইফরা (ছদ্মনাম) তাঁদের একজন। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংগঠন ইউনিসেফ-এর হিসেব অনুযায়ী, তাঁর দেশ সোমালিয়াতে এফজিএমের চর্চা সবচেয়ে বেশি। দেশটির ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সি ৯৮ শতাংশ নারীই এর শিকার।

''যৌনাঙ্গচ্ছেদের জন্য তথাকথিত হাজাম রয়েছে। তবে তাঁরা আসলে জানেন না তাঁরা ঠিক কী করছেন। তাঁদের কাছে একটি ছুরি এবং একটি রেজার থাকে। আর সেগুলো দিয়ে তাঁরা কেটে ফেলে,'' বলেন ইফরা।

নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ নানা প্রক্রিয়ায় করা হয়। কোথাও কোথাও যৌনাঙ্গের ভগাঙ্কুরের অংশবিশেষ কেটে ফেলা হয়। আবার মেয়েরা যাতে যৌনমিলনের সময় বেশি আনন্দ না পায় এবং বিয়ের আগ অবধি কুমারী থাকে, সেই উদ্দেশ্যে অনেক জায়গায় যোনির প্রবেশপথও সেলাই করে দেয়া হয়।। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে বিশ কোটি নারী এফজিএম-এর শিকার।

আর এর ফলে নারীর মাসিকের সময় প্রদাহ, কাটাস্থলে বারংবার ইনফেকশন, সন্তান জন্মদানে সমস্যা এবং যৌনক্ষমতা কমে যাওয়াসহ নানা সমস্যা হয়। জার্মানিতে এফজিএম নিষিদ্ধ হলেও অভিবাসী পরিবারে জন্ম নেয়া ১৫,৫০০ মেয়ে এই চর্চার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে আছে বলে জানিয়েছে 'ট্যঁর দ্যে ফ্যাম'। কেননা, তাদের ছুটি কাটানোর নামে বাবা-মায়ের দেশে নিয়ে এফজিএম করানো হতে পারে। তাই, তাদের রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।