কেরলের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ, বৈঠকে বসার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের


বানভাসি: ডুবে গিয়েছে কোচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। 

বন্যাবিধ্বস্ত কেরলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গত কাল ২৫ জনের পরে বৃহস্পতিবার গোটা রাজ্যের বিভিন্ন অংশে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ৮৭ পেরিয়ে যাবে বলে মনে করছে প্রশাসন। এই পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে আজ দুপুরের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, কেরলের বন্যা-পরিস্থিতি 'ভয়াবহ।' মুল্লাপেরিয়ার বাঁধের জলস্তর কমাতে জাতীয় সঙ্কট মোকাবিলা কমিটির সঙ্গে কাল রাজ্যগুলিকে বৈঠকে বসতে বলেছে আদালত।

মুল্লাপেরিয়ার-সহ ৩৫টি জলাধারের বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। মুল্লাপেরিয়ার নিয়ে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন উদ্বেগ জানানোর পরে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এপ্পাডি কে পলানীস্বামী বৃহস্পতিবার তাঁকে চিঠি লিখে জানান, বাঁধ সব দিক থেকেই সুরক্ষিত রয়েছে। এই বাঁধে ফাটল ধরার গুজব উড়িয়ে দিয়েছে কেরল সরকার। সোশ্যাল মিডিয়ায় কারা এ নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে তা খুঁজে বার করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এ দিন বন্যার কথা মাথায় রেখে কেরল ও তামিলনাড়ুকে জাতীয় সঙ্কট মোকাবিলা কমিটির সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছনোর কথা বলেছে।

মুল্লাপেরিয়ার বাঁধের জলস্তর ১৩৯ ফুটে নামিয়ে আনার কথা জানিয়েছিল কেরল। কিন্তু তামিলনাড়ু সরকার কোর্টে তার বিরোধিতা করে। তারা বলেছে, এই মুহূর্তে বাঁধে ২০ হাজার কিউসেক জল রয়েছে। এত বৃষ্টির মধ্যে দুম করে জলস্তর কমানো হয়তো সম্ভব হবে না। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ও বিচারপতি ইন্দু মলহোত্রের বেঞ্চ বলেছে, ''সঙ্কটের এই মুহূর্তে কোনও পক্ষেরই বিরোধিতার অবস্থান নেওয়া উচিত নয়।'' বেঞ্চের মতে, ''অতীতকে এর মধ্যে টানবেন না। বর্তমান পরিস্থিতির কথা ভেবে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন।'' অতীতে মুল্লাপেরিয়ার বাঁধ নিয়ে কেরল-তামিলনাড়ুর বিরোধ দূরে সরিয়ে রাখার দিকে ইঙ্গিত করেছে শীর্ষ আদালত।

কেরলের পরিস্থিতিতে টুইটারে উদ্বেগ জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীও। রাজ্যে কংগ্রেস বিরোধী আসনে থাকলেও তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সাহায্য করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন সবার কাছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অনুরোধ করেছেন, রাজ্যে আরও বেশি করে জওয়ান এবং নৌসেনা মোতায়েন করার জন্য। আগামিকাল কেরল যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

জলের তলায় থাকা কোচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ২৬ অগস্ট পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। প্রথমে ১৮ অগস্ট পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হলেও বিমানবন্দরের অবস্থা দেখে আরও আট দিন বন্ধ রাখার কথা ভাবা হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ছিল কোচির মেট্রো পরিষেবাও। আজ বিকেল চারটের পরে চালু হয়েছে মেট্রো। আরও ১২টি জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যে কারণে রবিবার পর্যন্ত লাল সতর্কতা জারি রয়েছে।

আজ ত্রিশূর, আলুভা ও পেরুমবভুরে ১৩২ জনকে আকাশপথে উদ্ধার করেছে ভারতীয় নৌসেনা। পোল্লাচি-ভালপারাই ঘাট রোডে এক কিলোমিটার জুড়ে বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা নাগাদ বড় ধস নামে। তার পরেও ছোটখাটো ধস এবং পাহাড় থেকে গড়িয়ে আসা পাথরের চাঁই রাস্তার বিভিন্ন অংশে পড়ে রয়েছে।