আধারের পর ডিএনএ বিল, ক্ষুব্ধ বিরোধীরা


নয়াদিল্লি : আধার সমস্যার পর এবার ডিএনএ টেকনোলজি বিল বিতর্ক নিয়ে দিল্লির দরবারে তোলপাড় শুরু হল। প্রশ্ন একটাই, নতুন করে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কি সঙ্কটে পড়তে চলেছে? এই ইস্যুতেই নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নামছে বিরোধী দলগুলি। সরাসরি দাবি উঠছে, দেশের নাগরিকদের ডিএনএর তথ্য জেনে নিতে চাইছে মোদি সরকার। তথ্যব্যাঙ্কে সাধারণের ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করে পরে কাজে লাগাবে কেন্দ্র। কংগ্রেস তো সাফ অভিযোগ করেছে, এ ধরনের বিল আনার মানেই হল নাগরিকদের ব্যক্তিগত চরিত্র জেনে নিয়ে নজরদারি। প্রয়োজনে ব্ল্যাকমেল। কংগ্রেস জানিয়েছে, 'আধার তথ্য ফাঁস হওয়ায় মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। একইভাবে এই ডিএনএ বিল পাশ হয়ে গেলে মানবদেহের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে কেন্দ্র যে পরবর্তীকালে তার অপ্রয়োগ করবে না, সে গ্যারান্টি কোথায়?' এই প্রশ্ন কিন্তু শুধু কংগ্রেস নয়, সমগ্র বিরোধীকুলের।

'দ্য ডিএনএ টেকনোলজি (‌ইউস অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন) রেগুলেশন বিল ২০১৮' নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির পরিচয় জানার লক্ষ্যেই আনা হয়েছে বলে সরকারিভাবে বলছে কেন্দ্র। তার জন্য ডিএনএ ডেটা ব্যাঙ্ক তৈরি করা হবে। প্রাথমিকভাবে অপরাধী, জরিমানার বিষয় এবং অনাথ ছেলেমেয়েদের পরিচয় জানার উদ্দেশ্যে ওই ডেটা ব্যাঙ্ক থাকবে বলে বিলে বলা আছে। ঩বিল অনুযায়ী, এই ব্যাঙ্ক জাতীয় স্তরের পাশাপাশি আঞ্চলিক স্তরেও থাকবে। ডিএনএ ডেটা ব্যাঙ্কের তথ্য কেউ ফাঁস করলে তার জন্য এক লক্ষ টাকার জরিমানা সহ তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের কথা বলা আছে।

এরপরও কিন্তু এই ইস্যুতে সরব হয়েছে বিরোধীরা। গত বাদল অধিবেশনের একেবারে শেষদিকে ৯ আগস্ট বিলটি লোকসভায় পেশ করেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। তখনই এর বিরোধিতা করেন কংগ্রেস এমপি অধীররঞ্জন চৌধুরি। আর কোনও এমপি সেসময় বিষয়টি নিয়ে সরব হননি। কিন্তু সামনেই লোকসভা ভোট। তাই বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নজরদারি চালানোর অভিযোগ তুলছে কংগ্রেস। শনিবারই নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। দলের নির্বাচনী কোর গ্রুপ কমিটি তৈরি করে ফেলেছেন কংগ্রেস সভাপতি। দলকে তাঁর নির্দেশ, মোদি সরকারের যে কোনও অপচেষ্টার বিষয় প্রচারে আনতে হবে।

সেই মতো ডিএনএ বিল নিয়ে এদিন সরব হয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র তথা পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস এমপি অভিষেক মনু সিংভির দাবি, 'এ ধরনের বিল আনার পিছনে মোদি সরকারের গোপন ও অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। ডেটা প্রোটেকশন বিল নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বি এন শ্রীকৃষ্ণ কমিটির দেওয়া রিপোর্টে গোপনীয়তা বজায় রাখার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। অথচ সেই বিল সংসদে না এনে আচমকা কেন ডিএনএ বিল আনা হল? এর থে঩কেই স্পষ্ট, সরকারের কোনও গোপন এজেন্ডা রয়েছে। অবিলম্বে এই বিল প্রত্যাহার করতে হবে।'

এই ইস্যুতে কড়া সমালোচনা করে মোদিকে রীতিমতো ফ্যাসিবাদী বলে আখ্যা দিয়েছে সিপিএম। দলের লোকসভার এমপি মহম্মদ সেলিম এদিন বলেন, 'সরকারি সিস্টেমকে ব্যবহার করে আধারের মাধ্যমে নাগরিকদের উপর নজরদারির একটি অস্ত্র কেন্দ্র তৈরি করছে। এবার ডিএনএ বিলের মাধ্যমে তার আরও গভীরে যেতে চাইছে ওরা। পরিষেবা নিশ্চিত করার বদলে সরকার যখন নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের দিকে ঝোঁকে, তখন তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ব্ল্যাকমেল করার রাস্তা খুলে রাখছে সরকার।' তৃণমূলের মুখপাত্র ডেরেক ও'ব্রায়ান বলেন, 'আধারে নাগরিকদের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগ ইতিমধ্যেই উঠেছে। সেই কারণেই যাবতীয় কিছুর সঙ্গে আধার লিঙ্কের বিপক্ষে আমরা। নাগরিকদের উপর মোদি সরকারের নজরদারি মানব না।'