রাসায়নিক মিশিয়ে দুধের ব্যবসা, ধৃত


‌ভেজাল গুঁড়োদুধের কারবারের বড় চক্র ধরল এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ। কিছুদিন আগে একটি নামী গুঁড়ো দুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা ইবিতে অভিযোগ জানায়, তাদের ব্র‌্যান্ডের ছবি ব্যবহার করে প্যাকেটজাত গুঁড়োদুধ বাজারে ছাড়া হয়েছে। সংস্থা জানতে পেরেছে, যে সমস্ত ডিলারের কাছে তারা তাদের তৈরি গুঁড়ো দুধ সরবরাহ করেনি, সেখান থেকে বিভিন্ন দোকানে ওই গুঁড়োদুধ বিক্রি হচ্ছে। ইবি তদন্তে নামে।
বড়বাজার এলাকার একটি বাড়িতে হানা দিয়ে তারা দেখে, একটি ঘরে রীতিমতো যন্ত্রপাতি বসিয়ে নকল গুঁড়োদুধ তৈরি হচ্ছে। এরপর জিজ্ঞাসাবাদ করতেই জানা যায়, জনৈক শৌভিক কুণ্ডু এই কারখানা চালিয়ে থাকেন। ১৬৭ নেতাজি সুভাষ রোডে ওই কারখানা। শৌভিকের বাড়ি ৯৫ অরবিন্দ সরণি এলাকায়। ওই বাড়িটির ৪ তলায় অনেকদিন ধরেই ভেজাল গুঁড়োদুধের কারখানা চলছিল।

তদন্তে জানা গেছে, অ্যারারুট মিশিয়ে ভেজাল দুধের কারবার চলছিল। এমনকী বেশ কয়েকজন লোককে রাখা হয়েছিল যারা নামী গুঁড়োদুধ সংস্থার প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন দোকানে মার্কেটিং করত। এই চক্র শুধু কলকাতা নয়, ইবি গোয়েন্দাদের সন্দেহ কলকাতা লাগোয়া বিভিন্ন জেলাতেও নামী গুঁড়োদুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার জাল প্যাকেট ব্যবহার করে তা সরবরাহ করা হত। এর ফলে ক্রেতারা ভাবতেন, তাঁরা ব্র‌্যান্ডেড কোম্পানির দুধ কিনে খাচ্ছেন। শিশুদেরও খাওয়ানো হচ্ছে। কিছুদিন আগেই ইবি ভেজাল ঘি এবং নকল আইসক্রিমের দোকানে হানা দিয়ে বিপুল সংখ্যক জাল খাবার জিনিস উদ্ধার করেছিল।
ক্রেতা সেজে ইবি আধিকারিকরা দোকানে যান। তাঁরা দেখেন, বেশ গুছিয়েই কারবার চলছে। তৈরি করা ভেজাল গুঁড়োদুধের প্যাকেট রাখা হয়েছে কয়েকটি পেটিতে। এগুলিই বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হত। নামী দুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার প্যাকেটের যে দাম, তার থেকে কিছুটা কম দামে এরা বাজারে জিনিস ছাড়ত। প্যাকেজিং এতটাই নিখুঁত যে ক্রেতারা ঘুণাক্ষরেও টের পেতেন না, তাঁরা পয়সা দিয়ে বিষ কিনে খাচ্ছেন। একটি ঘরে মজুত ছিল নামী কোম্পানির ছাপ মারা অজস্র প্লাস্টিকের প্যাকেট। রাতারাতি এগুলিকে ভর্তি করে বাজারে পাঠিয়ে দেওয়া হত।

কীভাবে তৈরি হত এই দুধ?‌ গোয়েন্দারা বলছেন, এরা মোটামুটি ভাবে অ্যারারুট, কিছু কেমিক্যাল এবং চিনির গুঁড়ো মিশিয়ে মেশিনে ফেলে সেগুলি তৈরি করত। এই তৈরি দুধে মেশানো হত এক ধরনের সুগন্ধ। প্যাকেট খুললেই যাতে আসল গুঁড়োদুধের সুবাস পাওয়া যায়। জলে গুললেও কোনও সন্দেহ হওয়ার কথা নয়। চা–‌কফি বা গরম জলে গুলে খেলেও চট করে বোঝার উপায় নেই। চিনির ভাগ একটু বেশিই থাকত। বিক্রির সময় বলা হত, নতুনভাবে তৈরি করা হচ্ছে। প্যাকেটের গায়ে যে সমস্ত বিষয় লেখা থাকত, তা সবই জাল। উদ্ধার হয়েছে ৫০০ কেজি এমন তৈরি গুঁড়োদুধ। ৪০ কেজি চিনির গুঁড়ো এবং ৫০ কেজি অ্যারারুট। বহু টাকা নাকি লগ্নিও করা হয়েছিল ভেজাল দুধের ব্যবসায়।

রাতারাতি ভেজাল গুঁড়োদুধের চক্র ছড়িয়ে পড়ছিল অলিতে–গলিতে ছোটখাটো দোকানে। ফয়েলে মুড়ে সুন্দরভাবে নিখুঁত প্যাকেজিংয়ের জোরেই ভালই বাজার ধরেছিল ভেজাল গুঁড়োদুধের কারবারিরা।

পুলিসের সন্দেহ শৌভিক কুণ্ডু এই চক্রের সবকিছু জানলেও জানতে পারেন। বৃহস্পতিবার তাঁকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিস হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। পুলিসি জেরায় নিশ্চয় দুধ–রহস্য স্পষ্ট হবে!‌‌