পাচার থেকে বাঁচাতে বিল পাশের আর্জি


চিঠিতে 'অভিভাবক' বলে সম্বোধন করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তার পরেই মানুষ পাচার চক্রের ফাঁদে পড়ে নির্যাতিতদের আকুল আবেদন: মানব পাচার রোধ, সুরক্ষা ও পুনর্বাসন বিল যত দ্রুত সম্ভব পাশ করিয়ে আমাদের বাঁচান।

মানব পাচার রোধে কঠোর আইন রয়েছে। কিন্তু তথ্য-পরিসংখ্যান বলছে, সেই আইন অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়া বা শাস্তি ঘোষণায় ভারত খুবই পিছিয়ে রয়েছে। সেই জন্য 'ট্র্যাফিকিং পার্সনস (প্রিভেনশন, প্রোটেকশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলেটশন) বিল ২০১৮-য় শাস্তির মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থার সংস্থানও রাখা হয়েছে ওই বিলে। লোকসভায় সেটি পাশ হলেও রাজ্যসভায় হয়নি। বিলটি লোকসভায় পাশ করানো সরকারের 'সৎ প্রচেষ্টা'র জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন হাজারখানেক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। সেই সঙ্গে তাঁদের আর্জি, সংসদের অন্য কক্ষেও বিলটি দ্রুত পাশ করানোর ব্যবস্থা করা হোক।

চিঠিতে ক্ষতিগ্রস্তেরা লিখেছেন, 'আমরা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছি। লড়াই করেছি। কিন্তু এর জন্য দেশের আর অপেক্ষা করা উচিত নয়।' পাচারকারীরা কী ভাবে তাঁদের জীবন 'তছনছ' করে দিয়েছে, তার বিবরণও দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। অর্থের জন্য কখনও ভিক্ষুক সাজিয়ে, কখনও বা অঙ্গচ্ছেদন করে, আবার কখনও মাদক চালানের কাজে লাগিয়ে পাচারকারীরা তাঁদের শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। এই ধরনের অত্যাচারের শিকার যাতে আর কেউ না-হন, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে চিঠিতে।

পাচারকারীদের হাত থেকে কোনও ক্রমে বেঁচে ফিরলেও সমাজের মূল স্রোতে ফেরা যে কতটা কঠিন, বৃহস্পতিবার সেই কথাই বলছিলেন চিঠিতে অন্যতম স্বাক্ষরকারী, উত্তর ২৪ পরগনার ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা লিলি বিবি (ছদ্মনাম)। তাঁর ক্ষোভ, উদ্ধারের পরে পাচারকারীদের শাস্তি দেওয়ার বদলে নির্যাতিতকেই হেনস্থা করা হয়। এই বিল পাশ হলে সেই সমস্যার কিছুটা সুরাহা হবে। কারণ পুনর্বাসনের সুযোগ অনেকটাই রাখা হয়েছে এই বিলে। সেটি পাশ হলে দ্রুত বিচার হবে, কঠোর শাস্তি পাবে পাচারকারী। চিঠির অন্য এক স্বাক্ষরকারী হালিমা খাতুন (নামবদল) বলেন, ''প্রধান সেবক মোদীজিকে লিখেছি, আমাদের মতো অবস্থায় আর কাউকে যাতে পড়তে না-হয়, তার ব্যবস্থা করুন।''

বিলে পাচারকারীদের ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সংস্থান রাখা হয়েছে। পাচারের পরে ক্রেতা ও বিক্রেতা একই শাস্তি হবে। পাচার করে নির্যাতিতকে যেখানে লুকিয়ে রাখা হয়, সেই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বন্দোবস্তও আছে বিলে। গোটা বিষয়টিতে নজরদারি চালাতে জাতীয় অ্যান্টি ট্র্যাফিকিং ব্যুরো (এনএটিবি) তৈরি করার সঙ্গে সঙ্গে বলা হয়েছে পুনর্বাসনের জন্য একটি তহবিল গড়ার কথাও। প্রাথমিক ভাবে ১০ কোটি টাকার তহবিল গড়া হবে।

জনস্বার্থে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা করেছেন উত্তর ২৪ পরগনার তিন তরুণী। তাঁদের আবেদন, পশ্চিমবঙ্গে পাচার চক্রের ফাঁদে পড়া মেয়েদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোর জন্য রাজ্য সরকার যাতে একটি নির্দিষ্ট প্রকল্প ঘোষণা করে, তার নির্দেশ দেওয়া হোক। বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।