ছেলের দেহ আগলে রাতভর স্টেশনে


কিশোর ছেলে বিজু দাস অসুস্থ। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রেফার করে দিলে তাঁকে গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তার মা-বাবা। নিউ কোচবিহার স্টেশনের কাছে পৌঁছতেই টান উঠতে শুরু করে বিজুর। তড়িঘড়ি ট্রেন থেকে নেমেও শেষ রক্ষে হয়নি। রেলের চিকিৎসক সেখানে পৌঁছে মৃত ঘোষণা করেন বিজুকে। শনিবার রাতভর ছেলেকে আগলে স্টেশনে বসে থাকতে হয় মা-বাবা, আত্মীয়দের। তাঁর বারবার বলছিলেন, "একবার হাসপাতালে নিয়ে যাই।" অভিযোগ, রেলকর্তারা কেউ রাজি হয়নি। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা সেখানে গিয়ে ওই বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়ান। রবিবার সকালে দেহ ময়নাতদন্তের পরে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় বিজুকে।

নিউ কোচবিহার স্টেশনের জিআরপি-র ওসি দীপেন রসৌলি বলেন, "নিয়ম অনুযায়ী রাতে দেহ পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহ ময়নাতদন্ত করানো হয়।" পুলিশ ও রেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, স্টেশনেই বিজুর মৃত্যু হয়। নিয়ম অনুযায়ী তাঁরা দেহ ময়নাতদন্ত না করে ছাড়তে পারে না। সে জন্যেই রাতে দেহ রেখে দিতে হবে। ব্লাড ডোনার অর্গানাইজেশনের সম্পাদক রাজা বৈদ্য বলেন, "নিয়মের বেড়া জালে এ ভাবে আটকে রাখলে বিপদ বাড়ে, কমে না। ওই পরিবারের লোকজন বার বার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছিলেন। সেক্ষেত্রে তা করলে ভাল হত। এসব ক্ষেত্রে শুধু নিয়ম নয়, মানবিকতার সঙ্গে ভেবে দেখা দরকার।"

পুলিশ সূত্রে খবর, বিজু দাসের বাড়ি অসমের ধুবুরি জেলার দক্ষিণ শালমারা গ্রামে। তাঁর বাবা রবিকান্তবাবু, মা কান্দ্রী দাস। দীর্ঘদিন ধরেই ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল বিজু। দীর্ঘ সময় তাকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। সেখানে ভাল ফল না হওয়ায় চিকিৎসকরাই আরও ভাল কোথাও চিকিৎসার পরামর্শ দেন। কলকাতা বা গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। সেই হিসেবেই তাকে গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁর অভিভাবকরা। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে চেপে তাঁরা গুয়াহাটি যাচ্ছিলেন। পুণ্ডিবাড়িতে বিজুর অসুস্থতা বেড়ে যায়। ভিতর থেকে টান উঠতে থাকে। সহযাত্রীদের পরামর্শে নিউ কোচবিহারে ছেলেকে নিয়ে নেমে পড়েন মা-বাবা। রেল পুলিশ-রেল কর্তারা খবর পেয়ে প্ল্যাটফর্মে যান। খবর দেওয়া হয় রেলের চিকিৎসককে। চিকিৎসক গিয়ে বিজু দাসকে মৃত ঘোষণা করেন। 

অভিযোগ, চিকিৎসক খবর পেয়ে আসতে অনেকটা সময় চলে যায়। তার বদলে বিজুকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করলে ভাল হত। ওই স্বেচ্ছাসেবীর সংস্থার সদস্য দীপ্তেশ সেন বলেন, "এ সব ক্ষেত্রে আর একটু দ্রুত ব্যবস্থা নিলে ভাল হয়। আর যেখানে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর সমস্ত প্রমাণ চোখে দেখা যায়, সেখানে দেহ আটকে রাখার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা উচিত।" রেলের এক কর্তা বলেন, "আমরা দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। চিকিৎসক কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে পৌঁছন। তার আগেই বিজু মারা যায়।"