রাজ্যের ওষুধের দোকানগুলির বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ


বর্ধমান: গোটা রাজ্যের প্রায় সমস্ত ওষুধের দোকানেই নেই কোনও স্থায়ী ফার্মাসিস্ট।উপরন্তু মোটা টাকার বিনিময়ে একজন ফার্মাসিস্টের লাইসেন্সকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে একাধিক দোকানে কার্যত ভাড়া খাটানো হচ্ছে।রবিবার তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত লয়েল কেমিষ্ট অ্যান্ড ড্রাগিষ্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামে তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত নয়া সংগঠনের জেলা সম্মেলনে এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠল৷

ওই অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাদের মতে, ড্রাগ অ্যান্ড কসমেটিক আইনানুসারে প্রতিটি ওষুধের দোকানে স্থায়ী ফার্মাসিষ্ট সহ সহকারী ফার্মাসিস্ট থাকা আবশ্যক একজন। কিন্তু বাস্তবে এই বিপরীত অবস্থা রাজ্যের অধিকাংশ ওষুধের দোকানেই। অধিকাংশ ওষুধের দোকানে স্থায়ী ফার্মাসিস্ট তো নেয়ই, উপরন্তু একজন ফার্মাসিস্টের লাইসেন্সকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে একাধিক দোকানে কার্যত ভাড়া খাটানো হচ্ছে মোটা টাকার বিনিময়ে।
 
আবার ওষুধ ব্যবসায়ীরাও ব্যবসারপ্রয়োজনে এই অবস্থাকে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ সরকারী নিয়মানুযায়ী, কোনেও ওষুধের দোকান করতে গেলে সংশ্লিষ্ট দোকানদারের ফার্মাসিস্ট লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। নিদেনপক্ষে তিনি সর্বক্ষণের জন্য একজন ফার্মাসিস্ট রাখছেন এমনটাই প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরই ওষুধ বিক্রির লাইসেন্স পাওয়ার কথা।

জানা গিয়েছে, কেবলমাত্র পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রায় চার হাজার ওষুধের দোকান থাকলেও ফার্মাসিস্ট রয়েছেন মাত্র প্রায় এই হাজার। ফলে অধিকাংশ ওষুধের দোকানই চলছে বিনা ফার্মাসিস্টে।

উল্লেখ্য, গত প্রায় ২৫ বছরেরও বেশি সময়ধরে গোটা রাজ্যে খুচরো ও পাইকারি ওষুধ বিক্রেতাদের নিয়ে একটিমাত্র সংগঠন গোটা রাজ্যে চালু ছিল। সম্প্রতি সেখান থেকে বেড়িয়ে এসে তৈরি করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের ছত্রছায়ায় লয়েল কেমিষ্ট এণ্ড ড্রাগিষ্ট ওয়েলফেয়ার অ্যসোসিয়েশন। রবিবার বর্ধমান জেলায় প্রথম এই নয়া সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল।

সম্মেলনে হাজির ছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ মমতাজ সংঘমিতা, বর্ধমান পুরসভার কাউন্সিলার খোকন দাস, শাহাবুদ্দিন খান, প্রদীপ রহমান সহ সংগঠনের জেলা সভাপতি লক্ষ্মীনারায়ণ কোনার, আহ্বায়ক তুহিন শুভ্র দে, রূপক সরকার, বৈদ্যনাথ কোঙার. রাজ্য নেতা সুব্রত মজুমদার প্রমুখরা।

সম্মেলনের উদ্বোধন করতে এসে সাংসদ তথা গাইনি বিভাগের বিশিষ্ট চিকিত্সক মমতাজ সংঘমিতা বলেন, হাসপাতালের সামনে ওষুধের দোকান থাকে। কিন্তু হাসপাতালেই সমস্ত ওষুধ দেওয়া গেলে ওই ওষুধের দোকানের কোনও প্রয়োজন থাকত না।

তিনি এদিন ওষুধ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে বলেন, অনেক সময়ই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ কিংবা অপ্রয়োজনীয় ওষুধ দেন ওষুধ ব্যবসায়ীরা। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ না দেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। জেলায় ফার্মাসিস্টদের অভাবের বিষয় সম্পর্কে সাংসদ বলেন, তিনি এব্যাপারে বর্ধমানে যাতে একটি কলেজ তৈরি করা যায় সে ব্যাপারে সরকারের কাছে আবেদন জানাবেন। একইসঙ্গে নয়া এই সংগঠনকেও এব্যাপারে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ তথা সাংসদ মমতাজ সংঘমিতা এদিন স্বীকার করেছেন, একজন ফার্মাসিস্ট যেমন একাধিক জায়গায় সই করে পিছনের দরজা দিয়ে অর্থ কামাচ্ছেন তেমন অনেক চিকিত্সকও রয়েছেন। এদিন তিনি এই নয়া সংগঠনের কাছে জীবনদায়ী কিছু সস্তার ওষুধ তৈরি করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন রাখার কথা বলেন।