শ্বাসরোধ করেই খুন পূজাকে


প্রসবের সপ্তাহখানেকও আগেও স্ত্রীকে বাচ্চা নষ্ট করে দেওয়ার জন্য বোঝাতে এসেছিলেন হাওড়ার দীপক জৈন। তা নিয়ে দু'জনের বাদানুবাদ গড়ায় হাতাহাতিতে। রাগের মাথায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুন করেন দীপক। নাক-মুখ চেপে ধরার জন্য ভেঙে যায় পূজার নাকের হাড়ও! নারকেলডাঙা মেন রোডে অন্তঃসত্ত্বা পূজা জৈনের খুনের ঘটনায় এমনটাই মনে করছে পুলিশ। ময়না-তদন্তে দেখা গিয়েছে, পূজার নাক থেকে রক্ত বেরিয়েছিল।

এই ঘটনায় পুলিশ এক রকম নিশ্চিত, শ্বশুরবাড়িতে ঢুকে পূজাকে খুন করেছিলেন তাঁর স্বামী দীপকই। পরে খাট সরিয়ে দেহটি নীচে রেখে চম্পট দেন তিনি। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত অবশ্য দীপক অধরা। রাজ্যের বাইরেও তাঁর খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, খুনের কারণ হিসেবে তদন্তে উঠে এসেছে, আর্থিক কারণে সন্তান চাইছিলেন না দীপক। আগেও দু'বার স্ত্রীর গর্ভপাত করান তিনি। সম্প্রতি ফের অন্তঃসত্ত্বা হলে পূজার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দীপক। পুলিশ জানিয়েছে, এ নিয়ে বচসার জেরেই নারকেলডাঙায় বাপের বাড়িতে চলে এসেছিলেন পূজা।

তদন্তকারীরা পূজার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, সম্প্রতি স্ত্রীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার শুরু করেছিলেন দীপক। সপ্তাহে একবার তাঁকে নারকেলডাঙার শ্বশুরবাড়িতে দেখতেও আসতেন। ঘটনার দিন অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার বাড়িতে একাই ছিলেন পূজা। বড় দিদি মঞ্জরী তখন বাবা ভগবতীপ্রসাদ গুপ্তকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওই বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল।

ফুলবাগান থানার এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ''তদন্তে মনে হচ্ছে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগেই কাজ সেরেছেন দীপক।'' বৃহস্পতিবার মঞ্জরী হাসপাতাল থেকে  বোনের খোঁজ নিতে ফোন করলে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন দীপক। তিনি জানান, পূজা শৌচালয়ে গিয়েছেন। পরে বার কয়েক ফোন করেও আর পূজার সঙ্গে কথা বলতে পারেননি মঞ্জরী। বাড়ি ফিরে তিনি পূজা বা দীপক কাউকেই দেখতে পাননি। পরের দিন সকালে ফুলবাগান থানায় নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন মঞ্জরী।
থানার তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ''মঞ্জরী জানিয়েছিলেন, পূজার তিন জোড়া জুতো ও মোবাইল বাড়িতেই ছিল। আমরাই বলি, আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এ ভাবে কত দূর যাবেন? ছাদে গিয়ে দেখুন। মাথা ঘুরে গিয়ে সেখানে পড়ে থাকতে পারেন।'' পুলিশের কথা শুনে বাড়ি ফিরে খোঁজাখুঁজি করতেই খাটের তলায় দেহটি মেলে।

আপাতত তদন্তকারীদের লক্ষ্য, দীপককে গ্রেফতার করা এবং তদন্তের পূর্ণ রিপোর্ট পেশ করা। পূজার মেজো দিদি অর্চনা বলেন, ''দীপক গ্রেফতার না হলে আমরা ভয়ে আছি।'' ইতিমধ্যে পূজার বাবাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মেয়ের মৃত্যুর কথা অবশ্য তিনি জানেন না।