শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও চলেছে লড়াই, কার্গিল যুদ্ধের নায়ক শহিদ বাত্রার এই বীরগাথা আসছে বায়োপিকে


স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে একাধিক রক্তক্ষয়ী অধ্যায় দেখেছে এদেশ। শত্রুর আক্রমণ আর নৃশংস হামলার মুখে পড়েও শেষ লগ্নে জয় ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে ১৩৩ কোটির এদেশ। আর বিভিন্ন সময়ে নানা ঐতিহাসিক পর্যায়ে ভারত দেখেছে তাঁর বীর সন্তানদের আত্মবলিদান। এমনই এক অধ্যায় রচনা করেছিলেন ক্যাপ্টেন বিক্রম বত্রা। '৯৯ কার্গিল যুদ্ধের এই 'শের শাহ'কে কুর্ণিশ জানায় আসমুদ্র হিমাচল। যাঁর বীরগাথা এবার ফুটে উঠতে চলেছে সত্তর এম এম-এ। বলিউডে আসছে এই শহিদ ক্যাপ্টেনের বায়োপিক। দেখে নেওয়া যাক কোন অদম্য সাহসে তিনি এই যুদ্ধ জয়ের অন্যতম কাণ্ডারী হয়ে ওঠেন।


শুরুর ঘটনা
এই কাহিনি ১৯৯৯ সালের। যখন কাশ্মীর সীমান্ত দিয়ে ক্রমেই ঢুকতে শুরু করে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। ভূস্বর্গে তখন চরম সংকটকাল। পাকিস্তানি সেনা ও জঙ্গিদের রুখতে সেই সময়ে বীর দর্পে এগিয়ে গিয়েছেন ভারতীয় সেনার জওয়ানরা। গর্বের সঙ্গে আত্মত্যাগ করেছেন দেশের জন্য। এমন এক সময় ভারতীয় সেনা পেয়েছিল ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রাকে।
   

'হয় পতাকা উত্তোলন করে ফিরব নয় ফিরবে আমার মরদেহ'
শেষেবার যেদিন বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে কথা হয় , সেদিন ক্যাপ্টেন বাত্রা বলেছিলেন, 'হয় জিতে দেশের পতাকা স্থাপন করব, নয়তো গায়ে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে ফিরব.. কিন্তু আমি ফিরব নিশ্চয়'.... তিনি ফিরেছিলেন কিন্তু শহিদের গর্ব নিয়ে ফিরেছিলেন। এক আহত সহকর্মীকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন বীর ক্যাপ্টেন।


কীভাবে এগিয়ে ছিলেন তাঁরা?
'৯৯ সালের ১ জুন, ক্যাপ্টেন বাত্রা ও তাংর টিমকে পাঠানো হয় কার্গিলের ৫১৪০ পয়েন্ট দখল করার উদ্দেশে। ১৭ হাজার ফিট উঁচুতে টিম নিয়ে উঠতেই ক্যাপ্টেন মুখোমুখি হন এক জঙ্গি কামান্ডরের। লড়াই চলে। খতম হয় পাক জঙ্গিরা। বাত্রার সাহসিকতার সামনে টিকতে পারেনি পাকিস্তানি জঙ্গিরা। এর পরবর্তী পর্যায় ছিল পয়েন্ট ৪৭৫০ দখন করা। যেখানে পৌঁছতেই ক্যাপ্টেন বাত্রার কাছে জঙ্গিদের বার্তা আসে ,'ফিরে যাও শের শাহ (ক্যাপ্টেন বাত্রা) তোমার দেহ নেওয়ার জন্য কেউ বেঁচে থাকবে না এখানে', পাল্টা জবাব দেন ক্যাপ্টেন, 'আমাদের নিয়ে না ভেবে নিজের সুরক্ষার কথা ভাবো।'
   

এরপর চলে লড়াই
সেদি ছিল ৭ জুলাই, ২৪ বছরের ক্যাপ্টেন বাত্রা কার্গিলের ৪৮৭৫ পয়েন্টে তখন লড়ছেন। এমন এক পরিস্থিতিতে পাক গোলায় বিদ্ধ হন তাঁর সহকর্মী। প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই শত্রুর গোলাবর্ষণ উপেক্ষা করে সহকর্মীকে বাঁচাতে যান ক্যাপ্টেন। দেশের কাছে এক অসামান্য অধ্যায় রেখে চিরতরে চলে যান কার্গিল যুদ্ধের এই বীর নায়ক।
   
আসছে বায়োপিক
ক্যাপ্টেন বাত্রার বীর গাথা নিয়ে রয়েছে একটি বই। আসছে বলিউড বায়োপিকও। তাঁর চরিত্রে দেখা যাবে বলিউড তারকা সিদ্ধার্থ মালহোত্রাকে। পরমবীর চক্র জয়ী এই সেনা নায়কের জন্ম ১৯৭৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। সবুজ ঘেরা পালামপুরের সন্তান বিক্রমের পড়াশুনো চণ্ডীগড়ের ডিএভি কলেজে। পরবর্তীকালে তিনি যোগ দেন ভারতীয় সেনায়। আর তাঁর বীরত্বের শৌর্যে আজও গর্ববোধ করে ১৩৩ কোটির দেশ ভারত।