আগে রক্ষা পাক কেরল, বাকি কথা পরে


করাল গ্রাস বোধহয় একেই বলে। ভয়াবহ বন্যার কবলে কেরল। রাজ্যের ১৪টি জেলার মধ্যে ১৩টিই বন্যা কবলিত। গ্রাম-শহর, লোকালয়-জঙ্গল, পাহাড়-নদী, উপত্যকা-চাষ জমি, রাস্তা-বিমানবন্দর, ঘরবাড়ি-মাঠময়দান— সব একাকার। সর্বত্র জল আর জল। এক ভয়ঙ্কর জলপ্রলয় যেন সর্বশক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ভারতের দক্ষিণতম প্রান্তে, যেন ভেঙে চিড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে সব কিছু।

কেরলের এই মহাপ্লাবনের ভয়াবহতা ঠিক কতটা, তা প্রত্যক্ষভাবে উপলব্ধি না করলে কারও পক্ষেই নিখুঁত ভাবে বোঝা সম্ভব নয় যে, কেরলে ঠিক কী পরিস্থিতি এখন। আমরা প্রত্যেকেই বা আমরা অনেকেই হয়তো বুঝতে পারছি যে, কেরলের বাসিন্দারা এখন যে ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নকে যাপন করছেন, তার প্রাবল্য দূর থেকে উপলব্ধি করা খুব কঠিন। তাই আমাদের প্রত্যেককেই এখন বুঝে নিতে হবে, বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে কেরলের পাশে দাঁড়ানো দরকার। যাঁর যেটুকু সামর্থ্য, সেটুকু দিয়েই কেরলকে রক্ষা করা দরকার। কেন্দ্রীয় সরকার কেরলের জন্য বিপর্যয় মোকাবিলা প্যাকেজ ঘোযণা করেছে। বিভিন্ন রাজ্যের সরকার নিজেদের কোষাগার থেকে কেরলকে টাকা পাঠাচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্ব-স্ব সক্ষমতার ভিত্তিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। কোনও কোনও দলের সাংসদ-বিধায়করা নিজেদের বেতনকে কেরলের জন্য উৎসর্গ করছেন। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সক্রিয় হচ্ছে। দেশের নাগরিকদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ নিজেদের সাধ্যমতো অর্থ সাহায্য পাঠাচ্ছেন।

সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতি কত টাকার, সে হিসেব এখনও স্পষ্ট নয়। সব মিলিয়ে যে পরিমাণ অর্থ সাহায্য কেরল পাচ্ছে, তা যথেষ্ট কি না, সে-ও এখনই বলা কঠিন। কেরল এখনও জলমগ্ন, জনজীবন এখনও বিপর্যয়ের গ্রাসে। এই ভয়ঙ্কর জলপ্লাবন সরে না যাওয়া পর্যন্ত বলা কঠিন, ঠিক কী কী প্রয়োজন সুদূর দক্ষিণের রাজ্যটির পুনর্গঠনের জন্য। কিন্তু তার মধ্যেও মুখে হাসি ফোটার অবকাশ তৈরি হয়। গোটা ভারত যে রকম স্বতঃপ্রণোদিত ভঙ্গিতে কেরলের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। ভেদাভেদ, অসহিষ্ণুতা, প্রাদেশিকতায় রোজ বিব্রত হতে থাকা এ ভূমি যে কেরলের বিপর্যয়কে ঘিরে মুহূর্তে একাত্ব হয়ে যেতে পারল, তা দেখে ভারতীয়ত্বে নিহিত অপার শক্তির প্রতি আস্থা বেড়ে যায়।

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, গত ১০০ বছরে এত বড় বন্যা দেখেনি রাজ্য। ঠিক কত টাকা কেরলের জন্য বরাদ্দ হওয়া প্রয়োজন, সে বিষয়ে রাজ্য সরকার সুনির্দিষ্ট মতামত জানাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার নিজের বিবেচনা অনুযায়ী বরাদ্দ ঘোষণা করছে। দেশের একাধিক বিরোধী দল বঞ্চনার অভিযোগ তুলছে। কেন্দ্র যে অর্থ সাহায্য ঘোষণা করেছে, তাতে কিছুই হওয়ার নয় বলে অনেকেই মত প্রকাশ করছেন। অনেকে আবার বলছেন, এ বিপর্যয় মানুষের তৈরি। রাজনীতির আঁচও গনগনিয়ে উঠছে মহাপ্লাবনকে ঘিরে।

কিন্তু এখন সময়টা এই রাজনীতির জন্য নয়। সর্বাগ্রে কেরলের পাশে দাঁড়াতে হবে। সর্বাগ্রে বিপর্যয়ের গ্রাস থেকে কোটি কোটি সহ নাগরিককে বাঁচাতে হবে। ভেদাভেদ ভুলে সবাই মিলে হাত বাড়ানোর যে দৃষ্টান্ত আমরা তৈরি করলাম, আপাতত তাতেই অটল থাকা যাক। কেরলবাসীকে আগে সঙ্কট মুক্ত করা যাক। দেনা-পাওনার হিসেব করার জন্য অনেক সময় আমরা প্রত্যেকেই পাব। তাই আপাতত কেরলের পাশে দাঁড়ানো যাক। আপাতত সঙ্কট মুক্তির জন্য প্রার্থনা করা যাক।