বাইকের হেলমেট নিয়ে নয়া নির্দেশিকা মোদী সরকারের, জেনে রাখুন না হলে বিপদে পড়বেন


পথ নিরাপত্তা নিয়ে কোমর বেধে নামছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সরকারও বেশ সতর্ক এই বিষয়ে। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী প্রতি বছর গোটা দেশে পথ-দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন গড়ে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ। দুর্ঘটনা ঘটছে দৈনিক গড়ে ১২১৪টি। এই তালিকায় বেশ উপরের দিকে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। মন্ত্রকের এই রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। দুর্ঘটনা এবং তাতে প্রাণহানি নিয়ে উদ্বিগ্ন সুপ্রিম কোর্টও। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশও দিয়েছে তারা। কেন্দ্র ও আদালতের নির্দেশ মেনে পথ-নিরাপত্তা বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে অনেক রাজ্য। তৈরি হয়েছে পথ-নিরাপত্তা আইন।

একই উদ্দেশ্যে এ বার নতুন আইন করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গও। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার আক্ষেপ, ''এক শ্রেণির চালকের বেপরোয়া মনোভাবের জন্য পথ-দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না।'' নবান্নের একাংশের মতে, শুধু 'সেফ ড্রাইভ, সেফ লাইফ' প্রচারে চালক ও নাগরিকদের যথেষ্ট সচেতন করা যাচ্ছে না। মাসখানেক আগে নবান্নে এক বৈঠকে রাজ্যের পথ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অবশেষে তাঁরই নির্দেশে নতুন আইন তৈরির উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন।

পথ নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্যের তত্পরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হেলমেটের ব্যবহার বেড়েছে। নানা রঙ-বেরঙের, ডিজাইনের হেলমেট বিক্রিও খুব সস্তায়। কিন্তু এই সস্তার হেলমেট খুঁজতে গিয়ে কি নিজেদেরকেই ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছি না আমরা? পথ নিরাপত্তা এবং ট্রাফিক আইনকে মাথায় রেখে এ বার হেলমেট বিধিতেও বেশ কড়াকড়ি নিয়ম আনছে কেন্দ্র। হেলমেটের ওজন ১২০০ গ্রাম বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। হেলমেটে থাকতে হবে আইএসআই-এর লোগো। আইএসআই-এর অনুমোদন ছাড়া হেলমেট বিক্রিতে জারি হতে চলেছে নিষেধাজ্ঞা।

২ অগাস্ট এই নয়া নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালনের বিষয়ে কড়া অবস্থান নিতে চলেছে কেন্দ্র। মন্ত্রক সূত্রে খবর কেন্দ্রের নির্দেশ ঠিকঠাক মানা হচ্ছে কি না দেখতে অভিযানে নামবে রাজ্য পরিবহন দফতর। আগামী বছরের গোড়া থেকেই অভিযান শুরু হবে। প্রথমেই হেলমেটের দোকানে দোকানে অভিযান চলবে। তারপর রাস্তায় রাস্তায় অভিযান। নির্দেশ না মানলে পরে পুলিসি অভিযানও হবে। আগামী বছর ১৫ জানুয়ারির মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে আইএসআই লোগোহীন হেলমেট।

রাজ্যের পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, নতুন আইনে একটি 'রোড সেফটি অথরিটি' বা পথ-নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ নামে একটি সংস্থা গড়া হবে। তার মাথায় থাকবেন মুখ্যসচিব। ওই সংস্থায় থাকবেন পুলিশ, পরিবহণ, শিক্ষা, তথ্য ও সংস্কৃতি, পূর্ত-সহ বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধিরা। একই ভাবে জেলা স্তরে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকের নেতৃত্বে একটি করে 'ডিস্ট্রিক্ট রোড সেফটি কাউন্সিল' বা জেলা পথ-নিরাপত্তা পরিষদ গড়া হবে। কলকাতায় এই পরিষদের মাথায় থাকবেন পুলিশ কমিশনার নিজেই। জেলা-ভিত্তিক পথ-দুর্ঘটনার যাবতীয় তথ্য একত্র করে পাঠানো হবে সরকারের কাছে।

তারা সমীক্ষা চালিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। ''নতুন আইনের আওতায় একটি তহবিল তৈরির সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার। সড়কপথে আইন ভাঙলে যে জরিমানা নেওয়া হয়, তারই একটি অংশ গিয়ে জমা হবে ওই তহবিলে। প্রয়োজনে রাজ্য সরকারও ওই তহবিলে অর্থ বরাদ্দ করবে,'' বললেন পরিবহণ দফতরের ওই কর্তা।