অবৈধ সম্পর্ক জেনে ফেলায় প্রেমিকাকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রীকে পুড়িয়ে খুন, দগ্ধ কন্যাও


কাটোয়া: অবৈধ সম্পর্ক জেনে ফেলায় প্রেমিকাকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল স্বামীর বিরুদ্ধে। বাদ যায়নি শিশুকন্যাও। তাকে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটে পূর্বস্থলী থানার মুকসিমপাড়া পঞ্চায়েতের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে। মৃতার নাম ঊর্মিলা বিবি(২১)। নৃশংস এই ঘটনার জেরে এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, ঘটনার পর মৃতার স্বামী মহিবুল ও তার বোন জ্যোৎস্না বিবিকে আটক করা হয়েছে।

পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন রাতে পূর্বস্থলী থানার জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে ঊর্মিলা ও তাঁর ন'মাসের শিশুকন্যা সুহানা খাতুনকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে। রাতেই ঊর্মিলা মারা যান। আর শিশুকন্যার শরীরের একাধিক অংশ পুড়ে গিয়েছে। ঊর্মিলার পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, মহিবুল তার প্রেমিকা ও বোনকে সঙ্গে নিয়ে ঊর্মিলাকে পুড়িয়ে মেরেছে। পাশাপাশি শিশুকন্যাকেও মেরে ফেলার চেষ্টা করে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, অগ্নিদগ্ধ ঊর্মিলা তার শিশুকন্যাকে নিয়ে বাঁচার জন্য চিৎকার করছিল। কিন্তু তাঁর দু'টি পা মহিবুল ও তার প্রেমিকা এবং বোন দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে। কোনওমতে তা খুলে ঊর্মিলা বাড়ির উঠানে বৃষ্টির জমা জলের মধ্যে শিশুকন্যাকে শুইয়ে রেখে নিজে গোয়ালঘরে গিয়ে গোরুর ডাবায় মুখ ডুবিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। আগুন নেভার পর প্রতিবাশীরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। অভিযোগ, সেসময় মহিবুল বাড়িতে থাকলেও ঊর্মিলাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। বরং তার গায়ে কেরোসিন ছিটিয়ে দিয়েছিল। উঠানে বৃষ্টির জলে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরানো মেয়েকেও সে ফিরে দেখেনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্বস্থলী থানার কালেখাঁতলা-১ পঞ্চায়েতের রামকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা সাদেক আলি শেখের মেয়ে ঊর্মিলার সঙ্গে বছর পাঁচেক আগে পাশের গ্রাম জয়কৃষ্ণপুরের যুবক মহিবুলের বিয়ে হয়। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই ঊর্মিলার উপর মহিবুল ও তার বাড়ির লোকজন অত্যাচার করত। এর আগেও কয়েকবার তাঁকে মহিবুল তার বাপেরবাড়িতে পাঠিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। এরপর ঊর্মিলার কন্যাসন্তান হলে তার উপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়ে। এদিকে, মহিবুল কিছুদিন ধরে জয়কৃষ্ণপুরের এক মহিলার সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সর্ম্পকে জড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। একথা ঊর্মিলা জানার পর থেকেই তাঁর উপর মহিবুল অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। স্থানীয়রা জানান, মহিবুলের অবৈধ সম্পর্কের ব্যাপারে ঊর্মিলা তাঁর বাবার কাছে জানিয়েছিলেন। এনিয়ে তাঁর বাবা মহিবুলকে বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি।

এদিন ঊর্মিলার বাবা বলেন, মহিবুলের যে অন্য সম্পর্ক আছে, তা আমরা জানতাম। কিন্তু তার জন্য যে আমার মেয়েকে ও পুড়িয়ে মারবে, সেটা কখনও ভাবিনি। শুধু তাই নয়, মহিবুল নিজের শিশুকন্যাকেও পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল। প্রতিবেশীরা বলেন, মহিবুল ওই মহিলাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাতে ঊর্মিলা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এনিয়ে প্রায়ই ঊর্মিলার সঙ্গে মহিবুলের অশান্তি হত। অভিযোগ, মহিবুলের বোন জোৎস্না বিবিও ঊর্মিলার উপর অত্যাচার করত। এদিন কাটোয়া হাসপাতালে দাঁড়িয়ে ঊর্মিলার দাদা নইমুদ্দিন মণ্ডল বলেন, আসলে মহিবুল ফের বিয়ে করতে চেয়েছিল। তাই ঊর্মিলার গায়ে আগুন লাগিয়ে ওকে পুড়িয়ে মারল। আমরা মহিবুলের চরম শাস্তি চাই।

এদিকে, এই ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্বস্থলী থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি। নইমুদ্দিন বলেন, মাটি দেওয়ার কাজ শেষ হলেই অভিযোগ করা হবে। পূর্বস্থলী থানার পুলিস জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ পেলে ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।