হিসেবই নেই, তবু নরেন্দ্র মোদীর দাবি চাকরি হচ্ছে!


কোনও দিনই এ ব্যাপারে হিসেব দিতে পারেননি তিনি। তবু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দাবি, তাঁর জমানায় চাকরি হচ্ছে। রোজগারের সুযোগও তৈরি হচ্ছে।

বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরেই মোদী জমানায় কর্মসংস্থানের বিষয়টি নিয়ে সরব। রাহুল গাঁধী ঠিক করে ফেলেছেন, ২০১৯-এর ভোটে মোদী জমানায় চাকরির হাহাকারই তাঁর প্রধান অস্ত্র হবে। তার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীও বলে দিয়েছেন, চাকরিই তো নেই! প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এ সব কোনও কিছুই মানতে নারাজ।

তিন মাস অন্তর শ্রম মন্ত্রক যে চাকরির হিসেব প্রকাশ করত, তা বন্ধ করে দিয়েছে মোদী সরকারই। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদীর প্রতিশ্রুতির সঙ্গে শ্রম মন্ত্রকের হিসেব মিলছে না বলেই ওটা বন্ধ করা হয়েছে। মোদী তবু নিজের দাবিতে অনড়। এমনকি পকোড়া ভাজাকে কর্মসংস্থান বলে দাবি করতেও ছাড়েননি তিনি!
এক সাক্ষাৎকারে চাকরি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি, যখন অর্থনীতির বৃদ্ধির হার এত বেশি, তখন চাকরির বাজার না বেড়ে থাকে কী করে? রাস্তায় নতুন ট্যাক্সি, বাস, ট্রাক নামছে। সেখানে চাকরি হচ্ছে না?

মোদীর যুক্তি উড়িয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, ''এই দাবি হাস্যকর বললেও কম বলা হয়। তিনি যে কাজের কথা বলছেন, সেগুলো হল কাজের বদলি। যিনি ধাবায় কাজ করছেন, তিনি হয়তো খেতমজুর ছিলেন। সেখানে রোজগার কমেছে বলেই ধাবার কাজ ধরতে হয়েছে।''

প্রধানমন্ত্রীর দাবি, রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি লগ্নি আসছে। তা থেকে কি কারখানা, নতুন চাকরি হচ্ছে না?

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, না। কারণ, বিদেশি লগ্নির সিংহভাগই আসছে চালু কারখানায় অংশীদারিত্ব কেনায়। কোনও সংস্থার মালিকানায় বিদেশি লগ্নির অনুপাত বাড়লে, তাতে নতুন কারখানা খুব বেশি তৈরি হয় না। নতুন চাকরিও তেমন হয় না।

প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি, ২০১৪-য় দেশে মোবাইল তৈরির দু'টি কারখানা ছিল। এখন তা ১২০-তে পৌঁছেছে। সেখানে চাকরি হয়নি? প্রায় ১৫ হাজার স্টার্ট-আপ বা নতুন সংস্থাকে সরকার নানা ভাবে সাহায্য করেছে। সেখানে চাকরি হয়নি? ১২ কোটি মুদ্রা ঋণ দেওয়া হয়েছে। একটি ঋণ থেকে কি একজনেরও চাকরি হয়নি? এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডের সংস্থার হিসেব থেকে দেখা যাচ্ছে, ৪৫ লক্ষ নতুন চাকরি হয়েছে।

কংগ্রেসের যুক্তি, প্রভিডেন্ট ফান্ডের খাতায় নতুন নাম ওঠা মানেই নতুন চাকরি নয়। এর বেশির ভাগই অসংগঠিত ক্ষেত্র থেকে সংগঠিত ক্ষেত্রে আসা সংস্থা। উল্টো দিকে সিএমআইই (সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি)-র হিসেব মতো, মোদী নোট বাতিল করার পরে ১.২৬ কোটি লোক চাকরি খুইয়েছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের (আইএলও) হিসেবে, ভারতের ৭৭ শতাংশ কর্মীর চাকরির স্থায়িত্ব অনিশ্চিত। এমনকি নীতি আয়োগও মেনে নিয়েছে, শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী এ দেশে কাজ মিলছে না। সন্তোষজনক চাকরিও মিলছে না।