দিনে ১ লক্ষ ২০ হাজার! লুঠের দখল ধরে রাখতে গিয়েই কি বিস্ফোরণ নারায়ণগড়ে?


একটা কারখানাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছিল তিনটি অঞ্চলের রাজনৈতিক সমীকরণ। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, শাসক দলের অন্দরের সমীকরণ। শ্রমিকদের মজুরি কেটে নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা লুঠ চলছিল প্রতি মাসে। মকরামপুর, পাকুড়সেনী, নারায়ণগড় থেকে অন্তত তেমনই অভিযোগ উঠে আসছে বৃহস্পতিবার সকালের বিস্ফোরণের পরে। ওই অভিযোগকে ঘিরেই জমছিল ক্ষোভের আগুন। পাল্টা বারুদও জমা করা হচ্ছিল বলে খবর। সেই বারুদেই কি উড়ে গেল তৃণমূলের মকরামপুর পার্টি অফিস? জল্পনা তেমনই। দুষ্কৃতীদের যে জড়ো করা হয়েছিল, সে ইঙ্গিত মিলছে স্থানীয় বিধায়কের মন্তব্যেও।

বৃহস্পতিবার সকালে পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকে তৃণমূলের একটি পার্টি অফিসে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে। ঝাঁ-চকচকে পার্টি অফিস মুহূর্তে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সুদীপ্ত ঘোষ নামে এক তৃণমূল কর্মী ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছেন। আরও চার জন গুরুতর জখম। এক জন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দু'জনকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কলকাতায়। আর এক জনকে ওডিশার কটকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁর একটি হাত ও একটি পা বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। তৃণমূল অবশ্য সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।

নারায়ণগড়ের বিস্ফোরণের অভিঘাত নারায়ণগড়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি। 'আওয়াজ' শোনা গিয়েছে গোটা রাজ্যেই। স্বাভাবিক ভাবেই সব নজর ঘুরে গিয়েছে নারায়ণগড়ের দিকে। তাতেই উঠে আসতে শুরু করেছে চাঞ্চল্যকর নানা অভিযোগ।

নারায়ণগড়ের পাকুড়সেনী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় একটি নামী ব্র্যান্ডেরপ্লাস্টিকের আসবাবপত্র তৈরির একটি কারখানা রয়েছে। নারায়ণগড়, মকরামপুর এবং পাকুড়সেনী— এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই বেশ কিছু দিন ধরে শাসক দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ওই কারখানাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছিল বলে খবর।

যে পার্টি অফিসে বিস্ফোরণ ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকালে, সেটি লক্ষ্মী শীটের পার্টি অফিস নামে পরিচিত। লক্ষ্মী শীট তৃণমূলের মকরামপুর অঞ্চল কমিটির সভাপতি। মকরামপুর এলাকায় লক্ষ্মী শীটের দাপট সর্বজনবিদিত। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩টি আসনের সবক'টিই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল। সৌজন্য লক্ষ্মীবাবুর দাপট। এলাকায় বিরোধী কণ্ঠস্বর প্রায় নেই। তাই কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস করছেন না। কিন্তু বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা আড়ালে আবডালে বলছেন, মকরামপুর পার্টি অফিসে এ দিন সকাল সকাল বৈঠকে বসেছিলেন লক্ষ্মী শীট,রঞ্জিত বসু এবং সূর্যকান্ত অট্ট। দলবল নিয়ে বৃহস্পতিবার ওই কারখানায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। বর্তমান ঠিকা শ্রমিকদের আটকে দিয়ে নতুন ঠিকা শ্রমিক ঢোকানোর পরিকল্পনা হয়েছিল। প্রয়োজনে সংঘর্ষে যাওয়ারও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। এলাকায় শোনা যাচ্ছে এমনই নানা কথা।

নারায়ণগড় ব্লকে আড়াআড়ি বিভাজন রয়েছে তৃণমূলের সংগঠনে। ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ এবং বিধায়ক প্রদ্যোৎ ঘোষ এক দিকে। আর জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সূর্যকান্ত অট্ট অন্য দিকে। পাকুড়সেনী এবং মকরামপুর অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি রঞ্জিত বসু এবং লক্ষ্মী শীটের সঙ্গে সম্প্রতি সূর্যকান্ত অট্টের ঘনিষ্ঠতাই বেশি বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। আর নারায়ণগড় অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি গৌরাঙ্গ জানা হলেন মিহির-প্রদ্যোৎদের দিকে।

ওই কারখানায় ঠিকা শ্রমিক সরবরাহ করার কারবার বেনামে রঞ্জিত বসু চালাচ্ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। স্থানীয় সিপিএম কর্মীদের দাবি, 'মা ব্রহ্মাণী' নামে একটি সংস্থার মাধ্যমে শুরুতে শুধু সাফাইকর্মী সরবরাহ করতেন তৃণমূল নেতা রঞ্জিত বসু। আর শ্রমিক সরবরাহ করত 'শাইন প্লাস্টিক' নামে একটি সংস্থা। পরে সেই সংস্থার কর্তাদের হঠিয়ে দিয়ে ঠিকা শ্রমিকদের কর্তৃত্বও রঞ্জিত বসু নিজে নিয়ে নেন বলে অভিযোগ। শ্রমিকদের জন্য রোজ কারখানা কর্তৃপক্ষ যে টাকা দিতেন, তার অনেকটাই রঞ্জিতবাবু কেটে নিতেন বলেও অনেকের দাবি।

জানিয়েছেন যে, ওই নামী সংস্থা দিন প্রতি ৩৫১ টাকা করে দিলেও, ঠিকাদারের হাত ঘুরে শ্রমিকদের হাতে পৌঁছয় সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা। কারও কারও ক্ষেত্রে সেটা ২৪০ টাকা বা ২৩০ টাকাতেও দাঁড়ায় বলে অভিযোগ। অর্থাৎ, প্রত্যেক শ্রমিকের মজুরি থেকে কমপক্ষে ১০০ টাকা করে রোজ কেটে নেওয়া হয় বলে তাঁদের দাবি।

ওই কারখানায় ঠিকা শ্রমিকের সংখ্যাপ্রায় বারোশো। প্রত্যেকের মজুরি থেকে ১০০ টাকা করে কাটলে এক দিনেই ঠিকাদারের হাতে যায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। মাসিক আমদানি ৪০ লক্