এটিএম জালিয়াতির মূল পান্ডা গ্রেফতার


এটিএম জালিয়াতির রোমানীয় দলের মূল পান্ডা নানাকে আটক করা হল ভারত-নেপাল সীমান্ত থেকে। বুধবার কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী জানান, ভারত-নেপাল সীমান্তের সোনালি এলাকা থেকে শুল্ক অফিসারেরা তাকে আটক করে কলকাতা পুলিশকে খবর দেন। তিনি বলেন, ''কলকাতা পুলিশের একটি দল সোনালি রওনা দিয়েছে। আগামিকাল নানাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হবে।''

আগেই ওভিডিউ সিমন ও দিমিত্রু ক্যালিন নামে দু'জন রোমানীয়কে গ্রেফতার করা হয়েছিল দিল্লি থেকে। তাদেরই এক সঙ্গী, নানা পালিয়ে গিয়েছিল। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সে-ই ছিল মূল পান্ডা। নানার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে লুক-আউট নোটিস জারি করেছিল পুলিশ। এই দলে শুধু রোমানীয় বা ভারতীয় এটিএম জালিয়াতই নয়, নাইজিরীয় জালিয়াতেরাও ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এ দিকে রোমানীয় জালিয়াতেরা ধরা পড়লেও শহরের এটিএম যে এখনও নিরাপদ নয়, তার প্রমাণ মিলেছে মঙ্গলবার। পুলিশ জানিয়েছে, ভবানীপুরের এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমে কারসাজি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা প়়ড়েছে এক জালিয়াত। তাকে জেরা করে আরও দু'জনকে পাক়ড়াও করা হয়েছে। ধৃতেরা মুম্বইয়ের বাসিন্দা। এ দিকে, মঙ্গলবারই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লোপাটের অভিযোগ দায়ের করেছেন অলোককুমার দত্ত নামে এক ব্যক্তি। তাঁর অভিযোগ, ৪ অগস্ট তিনি অ্যাকাউন্ট শেষ বার ব্যবহার করেছিলেন। মঙ্গলবার এটিএমে গিয়ে দেখেন, প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা উধাও!

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে এলগিন রোডের একটি এটিএমে স্কিমার মেশিন লাগানোর সময়ে রোহিত নায়ার নামে এক জালিয়াত ধরা পড়ে। পরে সৈয়দ সায়দ ওরফে সাহিল খান নামে তার এক সঙ্গীকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে ও সুধীর রাজন নামে আর এক সঙ্গীকে সিআইটি রোড থেকে পাকড়াও করে পুলিশ। বুধবার ধৃতদের ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে ১৩ দিনের পুলিশি হেফাজত দেন বিচারক। ধৃতদের থেকে ক্লোন করা কার্ড, ক্লোনিং মেশিন, স্ক্রু ড্রাইভার, গোপন ক্যামেরা, ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের একশোর বেশি গ্রাহকের তথ্যও মিলেছে তাদের থেকে।

পুলিশের দাবি, ধৃতেরা দুই রোমানীয়ের হয়ে কাজ করত। রোহিত এর আগেও এক বার এটিএম জালিয়াতিতে গ্রেফতার হয়েছে। রোমানীয়েরাই এই তিন জনের কথা জানিয়েছিল। নিউ মার্কেট ও মল্লিকবাজারের এটিএম থেকে স্কিমিং মেশিন লাগিয়ে কার্ড ক্লোন করত এই তিন জালিয়াতই। দিন দুই আগে কসবার এটিএমে টাকা তোলার জন্য স্কিমিং মেশিন লাগাচ্ছিল এরাই। গতকাল ভবানীপুরের এটিএমে হাতেনাতে জালিয়াতকে ধরার জন্য কলকাতা পুলিশ পুরস্কৃত করেছে এটিএমের দুই রক্ষীকে।

ভবানীপুরের এটিএমের রক্ষী শেখ সৈইফউদ্দিন জানান, তিনি এটিএম কাউন্টারের ভিতরে ছিলেন। হঠাৎ শব্দ শুনে বেরিয়ে এসে দেখেন, এক যুবক মেশিনে কার্ড ঢোকানোর জায়গায় স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে কিছু লাগানোর চেষ্টা করছে। সৈইফউদ্দিন বলেন, ''ওই যুবকের কলার চেপে ধরে চিৎকার করতে থাকি। ভবানীপুর থানার পুলিশের হাতে তুলে দিই।'' পুলিশের দাবি, রোহিতকে ধরা প়ড়তে দেখে বাকি দুই সঙ্গী চম্পট দেয়। রোহিত জেরায় দু'জনের নাম ও হদিস বলে দেওয়ায় তারাও ধরা পড়ে।
পুলিশ জানিয়েছে, দিন সাতেক আগে ওই যুবকেরা কলকাতায় এসেছিল। ভবানীপুর ও হাওড়ার দু'টি হোটেলে তারা ছিল। এই তিন জনের পান্ডা সৈয়দ। কলকাতার আগে এই তিন জন পুণেতে ৭ লক্ষ টাকা ও মুম্বইয়ে প্রায় ১২ লক্ষ টাকার জালিয়াতি করেছে। ধৃতরা জানিয়েছে, কলকাতার খবরের কাগজ পড়ে তারা সতর্ক হয়ে গিয়েছিল। তাই মঙ্গলবার ভবানীপুরের ওই এটিএমে স্কিমার মেশিন বসিয়ে মুম্বই উড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

তিহাড় জেলে থাকা অপর রোমানীয় বন্দি কর্নেলকে জেরা করে ধৃত দুই রোমানীয়ের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। জেরায় জানা গিয়েছে, কর্নেল ওই দুই রোমানীয় ওভিডিউ সিমন ও দিমিত্রু ক্যালিনকে টাকা জোগাড় করে তার জামিনের ব্যবস্থা করতে বলেছিল।