মাদুর বুনে জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের তাপস


তাপস জানা

কলকাতা : একেই বলে অদৃষ্ট। দীর্ঘ সংগ্রামের পর অবশেষে আলোর পথে গ্রামবাংলার এক ছাপোষা ঘরের মানুষ। পেশায় তিনি মাদুর শিল্পী। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পশ্চিম বেগুনি গ্রামের এই মাদুর শিল্পী তাপস জানা এবার পাচ্ছেন জাতীয় পুরস্কার। ১৪ ডিসেম্বর দেশের সেরা সম্মান তাঁর হাতে তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

সবে তখন ক্লাস থ্রি থেকে ফোর। দিনের পর দিন কামাই হতে লাগল স্কুল। ফলে তাকে স্কুলছুটের তালিকায় ফেলে দিলেন শিক্ষকেরা। বেশ কিছুদিন এভাবে কাটল। পরে তারপর অবশ্য আসল সত্যিটা আসল প্রকাশ্যে। শিক্ষকেরা জানতে পারলেন, নুন আনতে পান্তা ফুরনো ঘরের ছেলে তাপস বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে মাদুর বোনে। সেই মাদুর বাড়ির পাশের হাটে বিক্রি করে সামান্য যে পয়সা উপার্জন হয় তা দিয়ে দু'বেলা ভালো করে আহারও জোটে না। এমন পরিস্থিতিতে পড়াশোনা করাটা তার কাছে যেন বিলাসিতা মাত্র। তবুও অদম্য মনের জোর নিয়ে এগিয়ে গেছে সে। শিক্ষকদের সহযোগিতায় স্নাতকও হয়। তবে আজও ভুলতে পারেননি পুরানো দিনগুলিকে। এমনকী ছাড়তে পারেননি ছোটোবেলার সেই পেশা। আজও মাদুর বোনেন তাপসবাবু। তবে এখন সহযোগিতা করেন তাঁর স্ত্রী। এটাই একমাত্র জীবিকা পরিবারের।

বর্তমানে অতীতের থেকে সামান্য পরিবর্তন হয়েছে আর্থিক অবস্থার। তবে বহাল তবিয়তে নেই। এখনও‌ মাঝেমধ্যে ব্যথা দেয় আর্থিক সংকটের যন্ত্রণা। মেয়ে B.Sc ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। ছেলে ইলেভেনে। নিজেদের আড়ম্বরহীন জীবন থেকে অর্থ বাঁচিয়েই ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে হয় বলে জানান তিনি। আর্থিক উন্নতি সেভাবে না হলেও বিভিন্ন নকশার মাদুর বুনে খ্যাতি পেয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই চিন ও জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশে পাড়ি দিয়েছে তাঁর হাতে তৈরি মাদুর। কলকাতার বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে প্রদর্শনী করতেও নিয়ে এসেছিলেন বিভিন্ন নকশার বেশকিছু মাদুর। এখানে আসার আগেই রাজধানী থেকে সুখবর আসে তাঁর বাড়িতে। জানানো হয়, ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তাঁকে শিল্পীর সম্মান জানাবেন। তাঁর হাতে তুলে দেবেন জাতীয় পুরস্কার। এই খবর শোনামাত্র চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তাপসবাবু। পরে অবশ্য যেভাবে বিভিন্ন হাটে মাদুর ফেরি করেন, অনেকটা সেই ভূমিকাতেই দেখা গেল বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারের প্রদর্শনী হলে।