আন্দামান-কলকাতা জাহাজ চলাচল বন্ধ


মিলছে না জাহাজ। ফলে, প্রায় এক মাসের উপর আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ার এবং কলকাতার মধ্যে যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। বানভাসি কেরালার চিন্তা বাতিল করে যাঁরা সমুদ্রপথে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে যেতে চাইছিলেন, তাঁদের জন্য আপাতত আশার খবর নেই। উল্টে শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার কর্তাদের হুঁশিয়ারি, কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রকের উদাসীনতায় হয়তো আন্দামান-কলকাতার মধ্যে জাহাজ পরিষেবা চিরতরেই স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে। তাতে সবথেকে বেশি ক্ষতি বাংলারই। কলকাতা ব্রাত্য থাকলেও চেন্নাই-আন্দামানের মধ্যে নিয়মিত জাহাজ চলাচল করছে। সুতরাং, এই কাণ্ডটিকে বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা হিসাবেও দেখছেন অনেকে।

দীর্ঘদিন ধরেই কলকাতা এবং আন্দমানের পোর্ট ব্লেয়ারের মধ্যে যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে শিপিং কর্পোরেশন। কয়েক বছর আগেও এই রুটে মোট তিনটি জাহাজ চলত- এমভি আকবর, এমভি হর্ষবর্ধন এবং এমভি নিকোবর। আকবর দু'বছর আগে থেকেই বন্ধ। আপাতত চেন্নাইয়ে অকেজো অবস্থায়। বয়সও ৪৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। গত এপ্রিলে মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া হর্ষবর্ধনকে বিক্রি করে দিয়েছে শিপিং কর্পোরেশন। সেটা এখন কলম্বোতে স্ক্র্যাপ করার কাজ চলছে। সবেধন নীলমনি ছিল নিকোবর। যার মালিক আন্দামান প্রশাসন। গত ১৯ জুলাই রাতে কলকাতা থেকে রওনা দিয়ে নিকোবর পরদিন গেঁওখালির কাছে একটি নির্মীয়মাণ জেটিতে ধাক্কা মারে। মেরামত করে ২১ জুলাই বেরিয়েও যায়। তারপর পোর্ট ব্লেয়ার হয়ে চেন্নাইয়ে যায় মেরামতের জন্য পাঠানো হয়। সেই থেকে আর নিকোবর আর কলকাতায় ফেরেনি। মেরামতিতে লাগবে অন্তত আরও মাস চারেক, যদিও তার বিকল্প হিসাবে শিপিং কর্পোরেশন অথবা আন্দামান প্রশাসন কোনও তরফই কলকাতা থেকে কোনও জাহাজ বরাদ্দ করেনি। অগস্টে কলকাতা থেকে একটাও জাহাজ ছাড়েনি। কলকাতার শিপিং অফিস থেকে আন্দামানের ডাইরেক্টরেট অফ শিপিং সার্ভিসেসকে একাধিক বার মেল পাঠানো হয়েছে। জাহাজের আশ্বাস মেলেনি। ফলে, কলকাতার শিপিং কর্পোরশনের আধিকারিকরা ধরেই নিচ্ছেন, আপাতত কলকাতা থেকে পোর্ট ব্লেয়ারের মধ্যে জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

সমুদ্রযাত্রার মজা নিতে অনেকেই কলকাতা থেকে জাহাজে আন্দামানে যেতেন এবং ফিরতেন বিমানে। তা ছাড়া, বাংলা থেকে অগণিত শ্রমিকও এই জাহাজেই আন্দামানে কাজে যেতেন। এতে অনেক কম খরচে আন্দামান যাওয়া-আসা করা যায়। মাসে অন্তত দু'বার পোর্ট ব্লেয়ার-কলকাতা যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল করত। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ শ্রমিকরা বিপাকে। তাঁরা আন্দামানে যেতে পারছেন না। আন্দামান থেকেও বাড়ি ফিরতে পারছেন না। অনেকে আবার চেন্নাই হয়ে বাড়ি ফিরছেন। 

শিপিং কর্পোরশনের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, এখন কলকাতা থেকে আন্দামান যেতে জাহাজের কেবিন-ভাড়া প্রায় সাত হাজার টাকা। সেখানে একটু আগে থেকে টিকিট কাটলে বিমানের ভাড়া সাত থেকে আট হাজার টাকা। ফলে, কলকাতা থেকে আর আগের মতো জাহাজ-যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। সাধারণ শ্রমিকরা জাহাজের বাঙ্কেই যাওয়া-আসা করেন। তাদের ভাড়াও কম। তা দিয়ে জাহাজের ব্যবসা চালানো অসম্ভব। সুতরাং, কলকাতা-আন্দামান রুটে কেউ যাত্রীবাহী জাহাজ চালাতে উৎসাহ দেখাচ্ছে না।