নাবালিকা ধর্ষণে ২ দোষীর আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং জরিমানা ২ লক্ষ টাকা করে


কলকাতা: ১২ বছরের এক নাবালিকাকে গণধর্ষণের ঘটনায় সুজয় সর্দার সহ দুই অপরাধীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল আদালত। শুক্রবার শিয়ালদহের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক জীমূতবাহন বিশ্বাস ওই আদেশ দিয়েছেন। বিচারক ওই দণ্ডাদেশের সঙ্গে দু'জনকেই দু'লক্ষ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর হাজতবাসের নির্দেশ দেন। আদালতের মন্তব্য, জরিমানার টাকা আদায় হলে সেই টাকার ৯০ শতাংশ তুলে দিতে হবে ওই নাবালিকার হাতে। পাশাপাশি এক মাসের মধ্যে নির্যাতিতাকে আরও তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা আইনি সহায়তা কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে জেলাশাসককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি নিযার্তিতার পরিবার যাতে সুরক্ষিত থাকে, তার জন্য‌ কলকাতা পুলিসের যুগ্ম কমিশনারকে (ক্রাইম) আলাদা নির্দেশে বলা হয়, তিনি যেন ডিসি'কে (ইএসডি) বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলেন। এই রায় ঘোষণার পর এই মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী বিবেক শর্মা বলেন, শিয়ালদহ আদালতের এই রায় এক কথায় 'যুগান্তকারী'। এই রায় সমাজে আলাদা একটি বার্তা বহন করবে। ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করার আগে অপরাধীর হাত কাঁপবে বলেও মন্তব্য করেন বিবেকবাবু। জেলার সহকারী মুখ্য সরকারি আইনজীবী শিবনাথ অধিকারী বলেন, আদালতের এই রায়ে আমরা খুশি।
এদিন বিচারক এই মামলার রায় দিতে গিয়ে ভরা এজলাসে বলেন, ওই নাবালিকার পরিবার অসহায়, দুঃস্থ। তার মা বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে সংসারকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালান। সেই পরিবারের কিশোরীকে তুলে নিয়ে গিয়ে অপরাধীরা যেভাবে গণধর্ষণ করেছে, তা ভাবলে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। এরা মহিলাদের সম্ভ্রমকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তদন্তকারী অফিসার অমিতকুমার হেমব্রম বলেন, এই মামলায় অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত শেষ করে কোর্টে চার্জশিট পেশ করা হয়। শুনানিও হয় অত্যন্ত দ্রুতগতিতে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে উল্টোডাঙা থানার বাসন্তী কলোনির বাসিন্দা ১২ বছরের ওই নাবালিকাকে অপহরণ করে স্থানীয় একটি নির্জন মাঠে নিয়ে যায় ওই দুই অভিযুক্ত। এরপর ওই নাবালিকাকে গণধর্ষণ করা হয়। এদিকে, অনেক রাত পর্যন্ত মেয়ে বাড়ি না ফেরায় তার মা খুঁজতে বের হন। তখনই পথে দেখা পান মেয়ের। সে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি দিকে আসছিল। সব কিছু শোনার পর তিনি মেয়েকে নিয়ে থানায় যান। পুলিসে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিস ধৃত দু'জনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, পকসো আইন সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করে।

পুলিস জানায়, এই ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে একজন নাবালক হওয়ায় তার মামলাটি জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য আইনজীবী সুমন সরকার ও আরও এক আইনজীবী বারবার আবেদন করেন। কিন্তু আদালত অপরাধের গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে ঢাল করে ওই আবেদন নাকচ করে দেন। পুলিস জানায়, এই মামলায় মোট সাক্ষী ছিল ন'জন।