গঙ্গা-সহ একাধিক নদীতে ছড়াবে বাজপেয়ীর নশ্বর দেহের ছাই, মহান আত্মায় কি পূণ্য খুঁজছেন যোগী


এক মহান আত্মা তিনি। ১৬ অগাস্ট থেকে অটল বিহারী বাজপেয়ী নামটা ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে পাকাপাকিভাবে স্থান করে নিয়েছে। এহেন নেতার ছাই-এ এখন পূণ্য় অর্জনের সন্ধানে নেমেছেন যোগী আদিত্যনাথ। আর তাই নিয়েছেন এক অভিনব উদ্যোগ। যাকে অনেকেই রাজনীতির চমক বলে মনে করছেন। এই নিয়ে অবশ্য বিতর্কও থেমে নেই। 


কী করতে চলেছেন যোগী? পঞ্চভুতে বিলিন হওয়া অটল বিহারী বাজপেয়ীর শরীরের অস্থি উত্তর প্রদেশের নদ-নদীতে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। গঙ্গা থেকে শুরু করে তাপ্তি, যমুনা, গোমতি, সিন্ধু, বরুণা-সহ একাধিক নদীতে এই অস্থি ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এই জন্য ১৭ অগাস্ট একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে উত্তর প্রদেশ সরকার।

মানব সভ্যতার ইতিহাসে নদী হল পবিত্রতার প্রতীক। কথায় আছে নদীর জলে পূর্ণ্য স্নান নিলে সমস্ত পাপ ধুয়ে যায়। তাই আজও অনেকেই আমরা কথার ছলে একে অপরকে নদীতে স্নান করে পাপ ধুয়ে ফেলার পরামর্শ দেই। 

ভারতে বসবাসকারীদের কাছে গঙ্গা হল এক পূণ্যতোয়া। এই বিশ্বাসে আজও অধিকাংশ হিন্দু বাড়িতে গঙ্গাজল ছিটিয়ে থাকেন। গঙ্গা স্নানকে পূণ্য স্নান বলে মনে করেন। কথিত আছে ২৫০০ সাল আগে গঙ্গা নদীর উৎপত্তি। বৈদিক সাহিত্যে গঙ্গার অবশ্য উল্লেখ মেলে না। বৈদিক যুগের পরের নদী গঙ্গা। পুরাণে কথিত রয়েছে দেবী পার্বতীর বোন হল গঙ্গা। শিবের জটায় গঙ্গার বাস। আর সেখান থেকেই উৎপত্তি এই গঙ্গার। ভারতীয় শাস্ত্রে যমুনা, তাপ্তি-দের ইতিহাসও যথেষ্ট গৌরবের এবং পবিত্রতার। আর এই সমস্ত নদী প্রবাহিত হয়েছে উত্তর প্রদেশের ভিতর দিয়ে। এমন সব পবিত্র নদী ছাড়াও উত্তর প্রদেশে রয়েছে একাধিক পবিত্র তীর্থস্থান। কিন্তু, উত্তর প্রদেশের পবিত্রতায় কি ভরসা রাখতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ? কারণ ক্ষমতায় আসার পর থেকেও তাঁকে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বলে আক্রমণ করতে কেউ কসুর করেনি। মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই যোগী আদিত্যনাথ বেআইনি কসাইখানা বন্ধ করা নিয়ে আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন। এই আক্রমণের রেশ কাটতে না কাটতেই শিশু মৃত্যু নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এমনকী, বিরোধীরা যোগীর সরকারকে হিন্দুদের সরকার বলেও আক্রমণ করে। ২০১১ সালের আদিম সুমারি অনুযায়ী উত্তর প্রদেশের মোট জনসংখ্যার ১৯.৩% মুসলিম। কিন্তু যোগীর নীতির জন্য মুসলিমরা বিপন্ন বলেও আওয়াজ ওঠে। অথচ, বহু মানুষেরই দাবি, যোগীর শাসনকালে কমেছে দুর্নীতির পরিমাণ। রাস্তা-ঘাট আগের থেকে ভালো হয়েছে। রাস্তায় এখন খানা-খন্দ চট করে পাওয়া যায় না। রাস্তায় বৈদ্যুত্যিন আলোর মানের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন যোগী। কমেছে অপরাধের পরিমাণ। আইন-শৃঙ্খলাও আগের থেকে অনেক ভালো। তবু, যোগীর সমালোচকের অভাব নেই। রাজনৈতিক মহলের একটা অংশের ধারনা অটল বিহারী বাজপেয়ীর মতো সর্বভারতীয় বরেণ্য একজন নেতার অস্থি রাজ্যের বিভিন্ন নদীতে ছড়িয়ে দিয়ে এক পবিত্রতার বাণী দিতে চাইছেন যোগী। প্রশ্ন একটাই- এভাবে গঙ্গা-সহ অন্য নদীতে অস্থি বিসর্জন দিয়ে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে পারবেন তো তিনি?