কোটিতে দ্যুতি, ১০ লাখে স্বপ্না ! রাজ্যের পুরস্কার নিয়ে দ্বন্দ্ব ক্রীড়ামহলে


কলকাতা : প্রথমে দেড় কোটি ও পরে আরও দেড় কোটি। সব মিলিয়ে ৩ কোটি টাকা পাচ্ছেন ওড়িশার অ্যাথলেট দ্যুতি চাঁদ। এদিকে হেপটাথেলনে সোনা এনে দিয়েছেন জলপাইগুড়ির স্বপ্না বর্মণ। তাঁর জন্য গতকাল পশ্চিমবঙ্গ সরকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। স্বপ্না পাচ্ছেন ১০ লাখ টাকা ও সরকারি চাকরি। তুলনাতেই পরিষ্কার দুই রাজ্যের পার্থক্য। আর তাতেই রুষ্ট রাজ্যের ক্রীড়াপ্রেমীরা। এই দৈন্যদশাতেই রাজ্য ছাড়ছেন অধিকাংশ অ্যাথলেট। চায়ের দোকান থেকে সোশাল মিডিয়া, প্রকাশ্যে আসছে ক্ষোভ। দেশকে সোনা এনে দিয়ে মাত্র এই সম্মান !

দেশের প্রথম মহিলা অ্যাথলেট হিসেবে হেপটাথেলনে স্বপ্না বর্মণের সোনা জয়। আর তাতে ধার্য মাত্র ১০ লাখ টাকা আর্থিক পুরস্কার ! স্বপ্নার মা যদিও কোনও আর্থিক পুরস্কার চাননি। শুধু বারবার জানিয়েছেন, এই জয় অনেক কষ্টের। সবাই আশীর্বাদ করুন। মুখে না বললেও পরিবারের হাল দেখেই স্পষ্ট, কতটা যন্ত্রণার ছিল এই লড়াই। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ফোন করেন। বারবার জানতে চান, কী চাই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সামনেও মুখ খোলেননি স্বপ্নার মা বাসনা দেবী। তারপরই রাজ্য সরকার ১০ লাখ টাকা ও একটি সরকারি চাকরির ঘোষণা করে। সরকারের এই পুরস্কার ঘোষণা নিয়ে বিভক্ত রাজ্যের ক্রীড়ামহল।

১০ লাখ টাকার আর্থিক পুরস্কার শুনে বিস্মিত প্রশান্ত কর্মকার। প্যারা অলিম্পিকে দেশকে সাফল্য এনে দেওয়ার কৃতিত্ব আছে প্রশান্তের। সেই সময় তাঁকে এই কৃতিত্বের জন্য বঙ্গ সরকার কোনও আর্থিক পুরস্কার দেয়নি। বরং কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছিল। একই সময়ে সাফল্য পাওয়ায় দোলা ব্যানার্জি, জ্যোতির্ময়ী শিকদার, সোমা বিশ্বাসদের আর্থিক পুরস্কার ও জমি দেওয়া হলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রশান্তের ব্যাপারে রা কাটেনি। বাংলা প্রশান্তকে কৃতিত্ব না দিলেও তাঁকে সাদরে ডেকে নিয়েছিল হরিয়ানা সরকার। তারপর থেকে গত ১০ বছর ধরে হরিয়ানার বাসিন্দা প্রশান্ত। অন্য সব অ্যাথলেটদের মতো তিনি স্বপ্নার সাফল্যে খুশি। তবে যে পরিমাণ অর্থ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে তাতে বিরক্ত। তাঁর মতে, জাতীয় সার্কিটে অন্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় স্বপ্নার নিজেকে হতাশ লাগবে। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা যেভাবে স্পোর্টসম্যানদের আর্থিক পুরস্কার দিচ্ছে তাতে নিজের ছোটো লাগাই স্বাভাবিক। প্রশান্ত বলছেন, "অন্য রাজ্যে ভারতীয় দলে সুযোগ পেলে ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। সেখানে সোনা জেতার পরে এই পরিমাণ টাকা দেওয়া হচ্ছে দেখে আমার হাসি পাচ্ছে। রাজ্যে কোনও ক্রীড়ানীতি নেই। তাই এই অবস্থা।"
দোলা যদিও সমালোচনার রাস্তায় হাঁটতে রাজি নন। বরং ইতিবাচকভাবে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে চান। তিনি বলেন ,"আমি বিষয়টি সমালোচকের দৃষ্টিতে দেখতে রাজি নই। বরং ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই। স্বপ্না সোনার পদক জিতেছে। ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমি ভীষণ খুশি। আজ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে আর্থিক পুরস্কার ও চাকরির কথা বলা হল, তাতেও খুশি। একটা উদ্যোগ শুরু হল বলতে পারি। আমরা যখন খেলেছি কিছুই পাইনি। একটা পুষ্পস্তবকও কেউ এগিয়ে দেয়নি। তাই অন্য রাজ্য কত দিল, তার তুলনা না করে আমি শুরু করার প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "২০১০ সালে আমি এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলাম। কমনওয়েলথ গেমসেও পদক ছিল। সে সময় কলকাতা পৌরনিগমের পক্ষ থেকে প্রথম সংবর্ধনা ও আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। সেসময়ে পৌরনিগমের দায়িত্বে ছিল তৃণমূল। বিরোধী শিবিরের উদ্যোগের পালটা হিসেবে সেবার আমাদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। তবে কোনও দিনই এ রাজ্যে সফল ক্রীড়াবিদদের ভরিয়ে দেওয়া হয়নি।"স্বপ্নার ক্ষেত্রে যেভাবে দ্রুত উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, তাতে স্বাগত জানালেন তিনি।