বিহারের মাওবাদী নেতা ধৃত আসানসোলে

আসানসোলে ধৃত মাওবাদী নেতা-সহ দুই।

বাসস্ট্যান্ডে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে এক মাওবাদী নেতা-সহ দু'জনকে গ্রেফতার করল আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ। ধৃত জিতেন্দ্র সিংহ ওরফে টাইগার ও হরেরাম পাসোয়ান বিহারের আওরঙ্গাবাদের বাসিন্দা। পুলিশের দাবি, জিতেন্দ্র আওরঙ্গাবাদে মাওবাদী জোনাল কমিটির সদস্য। তবে অন্য জনের মাওবাদী-যোগ এ পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।

পশ্চিম বর্ধমানের বরাকর ফাঁড়ির পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় ওই দু'জন পুলিশের টহলদার গাড়ি দেখে চম্পট দেওয়ার চেষ্টা করে। সন্দেহ হওয়ায় দু'জনকে পুলিশ পাকড়াও করে। কমিশনারেটের কর্তাদের দাবি, টানা জেরায় জিতেন্দ্র তাঁদের কাছে মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে তার যোগাযোগের কথা স্বীকার করেছে। তাদের কাছ থেকে একটি ৯ এমএম পিস্তল ও পাঁচটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। বিহার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে কমিশনারেট জানতে পেরেছে, জিতেন্দ্রের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত বিহার ও ঝাড়খণ্ডের একাধিক থানায় খুন, লুটপাট, রেল লাইন ওড়ানো, বিস্ফোরক তৈরি-সহ নানা অভিযোগে প্রায় ২৫টি মামলা রয়েছে। এমনকি, ২০০৫-এ বিহারের জেহানাবাদ জেল ভেঙে তিনশোরও বেশি মাওবাদী নেতা, কর্মীদের পালানোর ঘটনাতেও জড়িত ছিল জিতেন্দ্র। এর আগে ২০১৬-য় ঝাড়খণ্ডের সিমডেগা এলাকা থেকে জিতেন্দ্রকে এক বার গ্রেফতার করা হলেও পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে সে বার সে পালিয়ে যায়। তদন্তকারীরা জানান, জিতেন্দ্র বর্তমানে বিহারের গয়ায় মাওবাদীদের বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ দিত।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই দু'জন মঙ্গলবার বিকেলে বরাকর স্টেশনে ট্রেন থেকে নামে। সন্ধ্যার পরে বরাকর বাসস্ট্যান্ডে আসে। এ পর্যন্ত হরেরামের সঙ্গে মাওবাদী সংগঠনের যোগাযোগ স্পষ্ট না হলেও পুলিশ জেনেছে, তার যাতায়াত রয়েছে সীতারামপুরে। তদন্তকারীরা জানান, জিতেন্দ্র তার গতিবিধির বিষয়ে এ পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু না বললেও হরেরাম জানিয়েছে, দু'জনেরই সীতারামপুর যৌনপল্লিতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। যদিও তদন্তকারীদের অনুমান, এই তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়।

বরাকরে ওই দু'জনে আসার অন্য একটি সম্ভাব্য কারণও জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁরা জানান, বিহারের বেশ কয়েকটি এলাকায় মাওবাদী সংগঠনগুলি সম্প্রতি অর্থ-সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ওই দু'জনের বরাকর বা পশ্চিম বর্ধমানের কোনও এলাকায় ব্যাঙ্ক বা অন্য কোথাও লুটপাটের পরিকল্পনা ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুলিশের অনুমান, এদের সঙ্গে স্থানীয় কয়েক জনের যোগ রয়েছে। ধৃতদের বুধবার আসানসোল আদালতে তোলা হলে তাদের বারো দিন পুলিশ হেফাজতের
নির্দেশ দেন বিচারক। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা বলেন, ''ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও কিছু বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।''