কললিস্ট থেকে সিসিটিভি ফুটেজ! ডোমজুড়ে ব্যাঙ্ককর্মী পার্থ খুনে 'রহস্যময়ী' নারীর যোগ

পঙ্কজ চক্রবর্তী (বাঁদিকে)

বেলা ১২টা ৫০ নাগাদ পার্থকে ফোন করেছিলেন ওই তরুণী। তারপর থেকেই সুইচ অফ হয়ে যায় পার্থর ফোন।

বন্ধন ব্যাঙ্কের কর্মী পার্থ চক্রবর্তী খুনের ঘটনায় খোঁজ মিলল 'রহস্যময়ী নারী'র। একদিকে সিসিটিভি ফুটেজ, অন্যদিকে পার্থর ফোনের কললিস্ট- এই দুয়ের মধ্যেই লুকিয়ে পার্থ চক্রবর্তীর খুনের মিসিং লিঙ্ক। এমনটাই মনে করছে পুলিস।

জানা গেছে, ব্যাঙ্ককর্মী পার্থ চক্রবর্তীর সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা হত এক তরুণীর। বুধবারও ওই তরুণী পার্থকে ফোন করেছিলেন। বেলা ১২টা ৫০ নাগাদ পার্থকে ফোন করেছিলেন ওই তরুণী। ঠিক তার ১০ মিনিটের মধ্যেই সুইচ অফ হয়ে যায় পার্থর ফোন। এদিকে, ফোন আসার পরই আর পঞ্চম জায়গায় আর কালেকশনে যাননি পার্থ।
 রহস্যজনকভাবে তারপরই নিখোঁজ হয়ে যান পার্থ। বেলা আড়াইটে নাগাদ তাঁর বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার হয়। পার্থ চক্রবর্তীর ফোনের কল রেকর্ডস খতিয়ে দেখে এমনটাই জানিয়েছে পুলিস।

অন্যদিকে, পার্থ চক্রবর্তীর বাবা পঙ্কজ চক্রবর্তী জানান, ডোমজুড় থানার ওসি রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ তাঁদের দেখিয়েছিলেন। সেই ফুটেজে দেখা যায় এক 'রহস্যময়ী' নারীকে। ফুটেজে দেখা যায়, ওই মহিলা পার্থকে ডাকেন। তাঁর ডাক শুনেই কিছুটা এগিয়ে যান পার্থ। যা দেখে মনে করা হচ্ছে, ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলার জন্যই এগিয়ে গিয়েছিলেন পার্থ। যদিও, তারপর আর সিসিটিভি ফুটেজে পার্থকে দেখা যায়নি। কিন্তু, ওই জায়গা থেকে ২ কিলোমিটার দূরেই পার্থর মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার হয়।

পার্থর বাবা আরও জানান, রোজ রাতে বাড়িতে ফোন করত ছেলে। বাড়ির সবার সঙ্গেই কথা বলত। তবে সম্প্রতি অফিসের জায়গায় সম্ভবত কিছু সমস্যা হচ্ছিল। ফোন যার ইঙ্গিত মাকে দিয়েছিল পার্থ। ফোনে পার্থ মাকে বলেছিল, "এখানে অনেক ঘটনা। ফোনে সব বলা যাবে না।" ৯ সেপ্টেম্বর বাড়িতে এসে সবকথা বলবে বলে মাকে জানিয়েছিল পার্থ। যদিও আর বাড়ি ফিরে সবকথা খুলে বলা হল না পার্থর। তার আগেই বুধবার দুপুরে আততায়ীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়ে গেলেন পার্থ।

নদীয়ার চাকদার বাসিন্দা ছিলেন পার্থ। তবে চাকরির কারণে হাওড়ার সলপে থাকতেন তিনি। সলপের বন্ধন ব্যাঙ্কের কর্মী ছিলেন। অফিসের উপরই কোয়ার্টারে থাকতেন পার্থ। বুধবার সকাল ৭টা নাগাদ ৫ জায়গা থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠী ঋণের টাকা কালেকশন করতে বেরন পার্থ। ৪ জায়গা ঘুরে ৩ লাখ টাকাও তোলেন তিনি। কিন্তু তারপর আর ৫ম জায়গায় যাননি পার্থ। তার আগেই খুন হয়ে যান চাকদার তরুণ। হাত, পা, মাথা কেটে বস্তাবন্দি করে রাস্তার ধারে ফেলে রাখা হয় পার্থর দেহ। কেউ যাতে চিনতে না পারে, সেজন্য শরীরের তিলও কেটে নেয় খুনি। অন্তর্বাসে লেগে থাকা দোকানের স্টিকার দেখে শনাক্ত করা হয় পার্থ চক্রবর্তীকে।

ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও কেটে নেওয়া হাত, পা, মাথার কোনও খোঁজ মেলেনি। খোঁজ মেলেনি সেই ৩ লাখ টাকারও। এলাকায় হাসিখুশি, মিশুকে, ঠান্ডা স্বভাবের ছেলে বলেই পরিচিত ছিল পার্থ। সেই ছেলের এমন মর্মান্তিক পরিণতি, কেউ-ই মেনে নিতে পারছেন না। শোকস্তব্ধ আত্মীয়-স্বজন থেকে পাড়া-প্রতিবেশী সবাই। কোলের ছেলেকে হারিয়ে চোখের জল বাঁধ মানছে বৃদ্ধা মায়ের। তাঁর একটাই কথা, ছেলের খুনির ফাঁসি চান তিনি।