মাছের পেটিতে মুঙ্গের থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে এরাজ্যে


 রাতের বাসে বিহারের মুঙ্গের থেকে মাছের পেটিতে মাউজার পিস্তল সহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্র ঢুকছে এরাজ্যে। পুলিসের নজর এড়াতেই এই কৌশল নিয়েছে অস্ত্র কারবারিরা। বাস যাত্রীদের চোখে ধুলো দিতে পেটির উপরে বরফ দিয়ে দুই থেকে তিনটি রুই, কাতলা রাখা হয়। তার নীচে থাকে অস্ত্র। পুলিস সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। শুক্রবার আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিস কালিপাহাড়ির কাছ থেকে দুই অস্ত্র কারবারিকে দুটি মাউজার সহ আটক করেছে। ওই দুই কারবারি বাইকে আসানসোল থেকে পিস্তল নিয়ে দুর্গাপুরের একজনকে বিক্রি করতে যাচ্ছিল। তাদের জেরা করে তদন্তকারীরা আরও কয়েকজন কারবারির নাম জানতে পেরেছে। পাশাপাশি বেআইনি অস্ত্রের রুটেরও সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ওই কারবারিদের মধ্যে একজনের বাড়ি জামুড়িয়া থানা এলাকায়। অন্যজন ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। এক পুলিস আধিকারিক বলেন, ওই দু'জনকে জেরা করে পুরো দলটির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। পুলিস কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা বলেন, ওই দু'জনকে জেরা চলছে।

পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, উন্নতমানের মাউজার এখনও মুঙ্গের থেকেই আসে। সীমান্তবর্তী এলাকায় পুলিস আগের থেকে কিছুটা নজরদারি বাড়ানোয় এখন কারবারিরা অস্ত্র নিয়ে আসার কৌশল বদলেছে। সাধারণত বিহার থেকে মাছ এরাজ্যে আসে না। কিন্তু বাসে একটি বা দুটি মাছের পেটি নিয়ে এলে কেউ সন্দেহ করে না। রাতের দিকে বিহার থেকে অনেক বাসই আসানসোলে আসে। সবার নজর এড়িয়ে মাছের পেটিতে নিয়ে আসা মাউজার আসানসোলের কোনও একটি জায়গায় নামানো হয়। অনেক সময় আবার অন্য কিছুর পেটিতেও লুকিয়ে অস্ত্র আসে। তারপর আসানসোল থেকে কারবারিরা তা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে। একটা বা দুটি মাউজার তারা পকেটে ভরেই নিয়ে চলে যায়। 

দুই ধরনের মাউজার সাধারণত মুঙ্গের থেকে আসে। সাদা ও কালো দুই রঙের মাউজার হয়। এক ধরনের মাউজারে ৯টি গুলি থাকে। এগুলির দাম হয় ৪০-৪৫ হাজার টাকা। অন্য ধরনের মাউজারে ১১টি গুলি থাকে। তার দাম ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। তবে, দূরত্ব অনুযায়ী দাম ওঠানামা করে। আসানসোলের আশেপাশে এই দামেই মাউজারগুলি বিক্রি হয়। আবার কলকাতা বা রাজ্যের অন্য কোথাও গিয়ে তা সরবরাহ করতে হলে তার দাম বেশি পড়ে যায় বলে পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে। 

এক পুলিস আধিকারিক বলেন, শিল্পাঞ্চলের আট থেকে ১০টি দল অস্ত্র সরবরাহ করে। তারা বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারও হয়েছে। কয়েকজন 'লাইন' বদলালেও অনেকেই এখনও ওই পেশাতে রয়ে গিয়েছে। এখন মুঙ্গেরের কারিগররা এরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এসে নাইন এমএম বা সেভেন এমএম জাতীয় পিস্তল তৈরি করছে ঠিকই কিন্তু মুঙ্গেরে তৈরি মাউজারের কদর অন্য রকম। তা দেখতে আলাদা। ছোট সাইজের এই পিস্তল পকেটে রাখলে তা কারও ধরার সাধ্য নেই। পাশাপাশি এই জাতীয় মাউজারের গুণগত মানও আলাদা। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতের বাসগুলিতে সেভাবে চেকিং হয় না। সেই সুযোগটাই অস্ত্র কারবারিরা কাজে লাগাচ্ছে। মাছের পেটি ছাড়াও তারা অন্য কোনও জিনিসের মধ্যেও মাউজার লুকিয়ে আনে।