চলছে বেপরোয়া কয়লাচুরি, প্লাবনের শঙ্কা খনিতে


আসানসোল : আশু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া না হলে, যে কোনও দিন বড় ধরনের দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে পারে ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার নরসুমদা কোলিয়ারি। কয়লা চোরেদের বেপরোয়া চুরির জন্য তৈরি হয়েছে অজস্র র৵াট হোল বা ইঁদুরের গর্ত। ফলে নরসুমদা কোলিয়ারির খনি গর্ভের পিট (দেওয়াল) ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ফলে খনিতে জল ঢুকে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যার থেকে চাষনালার মতো এই কোলিয়ারিতে জল ঢুকে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি সামনে আসার পর খনি আধিকারিক থেকে শ্রমিক সংগঠনগুলি শঙ্কা প্রকাশ করেছে। 

জানা গিয়েছে, সম্প্রতি নরসুমদা কোলিয়ারির ম্যানেজার-সহ পাঁচ সদস্যের একটি দল কোলিয়ারির খনি পিট পরিদর্শন করেন। তার একটি রিপোর্টও তাঁরা তৈরি করেছেন। সেই রিপোর্টেই খনি গর্ভের অভ্যন্তরের চেহারা স্পষ্ট হয়েছে। ওই রিপোর্টো বলা হয়েছে, গত ৯ অগস্ট কোলিয়ারির সেফটি অফিসার-সহ পাঁচ জনকে নিয়ে পরিদর্শন করেন ম্যানেজার। পরিদর্শনে দেখা গিয়েছে, কোলিয়ারির খনি গর্ভে জল ঢোকা আটকাতে যে দেওয়াল রয়েছে, তার অনেকটাই চোরেরা কেটে নিয়েছে। এর ফলে ওই দেওয়াল অনেকটাই দুর্বল হয়ে গিয়েছে। তা যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে। 
এ প্রসঙ্গে সোদপুর এরিয়ার সিটু নেতা তথা জেসিসির (জয়েন্ট কোল কনসালটেটিভ কমিটি) সদস্য সুজিত ভট্টাচার্য বলেন, 'নরসুমদা ও পাটমোহনা কোলিয়ারির মাঝে জল আটকানোর জন্য ১০০ মিটারের একটি দেওয়াল রয়েছে। খবর পেয়েছি, তার মধ্যে ৫০ মিটার দেওয়াল কেটে নেওয়া হয়েছে। খনি গর্ভে ৪০ লক্ষ গ্যালন জল রয়েছে। দেওয়াল পাতলা হয়ে যওয়ায় তা যে কোনও সময় ভেঙে জল ঢুকে যেতে পারে। দুর্ঘটনা ঘটে গেলে কর্মীরা বিপদে পড়তে পারেন। আমরা এই নিয়ে জেসিসি পর্যায়ে একটা বৈঠকে আলোচনা করে একটা রিপোর্ট তৈরি করেছি। আমরা তা সোদপুর এরিয়ার জিএম ও ইসিএলের সর্বোচ্চ স্তরে পাঠাব যাতে, অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।' 

এ ব্যাপারে এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার এম কে যোশীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'একটি রিপোর্ট পেয়েছি। যেখানে বলা হয়েছে, অবৈধ র৵াট হোলের কারণে খনির পিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা কয়লা চোরেদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে মাঝেমাঝেই ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনকেও বলি। কিন্তু, কোনও ভাবে কিছু হচ্ছে না। প্রশাসন উদ্যোগী না হলে, এই দৌরাত্ম্য ঠেকানো সম্ভব নয়।' 

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে দুর্গাপুজোর সময়ে একবার ডিজিএমএসের (ডিরেক্টর জেনারেল অফ মাইনস সেফটি) রিপোর্টের ভিত্তিতে সোদপুর এরিয়ার পাটমোহনা কোলিয়ারি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সময় ওখান দিয়ে প্রচুর পরিমাণে জল ঢুকে গিয়েছিল। তখন শ্রমিক আন্দোলন ও কর্মীদের চাপে ইসিএল দুশোটিরও বেশি র৵াট হোল বন্ধ করে। পরে ফের ওই খনি চালু করা হয়। এই ক্ষেত্রে কর্মীদের দাবি, পাটমোহনার মতোই নরসুমদাকে বাঁচাতে ইসিএলকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে হবে।