চলে গেলেন 'কুইন অফ সোলস' এরিতা ফ্রাঙ্কলিন

১৯৬৮ থেকে ২০০৮, টানা ৪০ বছরে মোট ১৮টি গ্রামি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন এরিতা ।


ডেট্রয়েট: ভগবান তোমাদের আশীর্বাদ করুন, সুস্থ রাখুন, তোমরা আমার জন্য প্রার্থনা করো...এক বছর আগে নিজের শহর ডেট্রয়েটে দর্শকদের উদ্দেশ্যে এই কথা বলেই অনুষ্ঠান শেষ করেছিলেন সোল মিউজিকের রানি । এক বছর পর দুরারোগ্য ক্যানসারের কাছে হার মানলেন বিশ্বের প্রথম মহিলা 'রক অ্যান্ড রোল হল অফ ফেম' এরিতা ফ্রাঙ্কলিন ।

১৯৪২-এর ২৫ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে জন্ম এরিতার । যদিও বেড়ে ওঠা ডেট্রয়েটে । মাত্র ৬ বছর বয়সেই বিচ্ছেদ হয়ে যায় বাবা, মায়ের । বাবা ছিলেন ব্যাপটিস্ট মিনিস্টার । বাবার হাত ধরেই তাই কিশোরী বয়সেই চার্চে গান গাওয়া শুরু করেন এরিতা । সান্নিধ্য পেয়েছিলেন অ্যালবার্টিনা ওয়াকার, মাহলিন জ্যাকসনের মতো কিংবদন্তি গসপেল শিল্পীদের । অল্পদিনের মধ্যেই তাই প্রকাশ পেতে থাকে তাঁর বহুমুখী প্রতিভা । মাত্র ১৪ বছরে তাঁর প্রথম অ্যালবাম 'সংস অফ ফেথ' মুক্তি পায় । আর অ্যান্ড বি, জ্যাজ, ব্লুজ ও গসপেল মিউজিকের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করতে থাকেন তিনি । শৈশবেই একা হয়ে যাওয়া এরিতা গানের কথা আর পিয়ানোর সুরেই নিজেকে প্রকাশ করতে থাকেন ।

১৮ বছর বয়সে কলম্বিয়া রেকর্ডসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন । শুরু হয় উত্থান । ১৯৬৫ সাল থেকেই হয়ে ওঠেন 'কুইন অফ সোলস' । ১৯৬৭-তে 'অ্যাটলান্টিক লেবেল'-এ চলে যান তিনি । এরপরই সেই কালজয়ী সৃষ্টি । 'রেসপেক্ট' । 'আ ন্যাচারাল ওম্যান', 'চেইন অফ ফুলস', 'কল মি'-র মতো কালজয়ী সৃষ্টি দিয়ে নিজের জায়গা করে নেন পুরুষশাসিত রক অ্যান্ড রোল জঁর-এ । ১৯৭২-এ মুক্তি পায় তাঁর গসপেল অ্যালবাম 'অ্যামেজিং গ্রেস' ।

১৯৬৮ থেকে ২০০৮, টানা ৪০ বছরে মোট ১৮টি গ্রামি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন এরিতা । 'রেসপেক্ট'-এর জন্য সেরা তাল-এর হাত ধরে আসে প্রথম গ্র্যামি । শেষটা এসেছিল 'নেভার গনা ব্রেক মাই ফেথ'-এর জন্য সেরা গসপেল সোল-ভোকাল পারফম্যান্সের জন্য । তাঁর ঝুলিতে রয়েছে দ্য ন্যাশনাল মেডেল অফ আর্টস এবং দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম-এর মতো সম্মান ।

সম্মান যেমন এসেছে, তেমনই সম্পর্কের টানাপড়েনও কম দেখেননি জীবনে । গসপেল সার্কিটে ট্যুর করতে করতে কিশোরী বয়সেই দুই ছেলের মা হয়েছিলেন এরিতা । বিয়ে করেছিলেন দুবার । ১৯ বছর বয়সে বাবার অমতে ভালবাসার টানে নিজের ব্যক্তিগত ম্যানেজার টেড হোয়াইটকে বিয়ে করেন ফ্র্যাঙ্কলিন । খুব অল্প সময়ের মধ্যেই স্বপ্নভঙ্গ হয় এরিতার । পরে বাবার চার্চেই অভিনেতা গ্লিন টারম্যানকে বিয়ে করেন তিনি । সুখের হয়নি সেই বিয়েও । বিচ্ছেদের পর তাঁর রোড ম্যানেজার কেন কানিংহ্যামের সঙ্গে দীর্ঘ ৭ বছরের সম্পর্কেও ছিলেন এরিতা ।
প্রতিভা, সম্মান, স্বপ্নপূরণ, বিতর্কে ভরা জীবন থেমে গেল আজ । ৭৬ বছর বয়সে । রেখে গেলেন তাঁর চার সন্তানকে । রয়ে গেলেন হৃদয়ের রানি হিসেবেই...