রাতারাতি বদলে গেল স্কুল সার্ভিসের ওয়েটিং লিস্ট, এক নম্বরে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া নেতার মেয়ে!


প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা পরেশ চন্দ্র অধিকারী। স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েটিং লিস্টে তাঁর মেয়ের নাম ঘিরেই হইচই পড়ে গিয়েছে।

এ যেন ভোজবাজি! যার নাম ৪৮ ঘণ্টা আগেও স্কুল সার্ভিস কমিশনের 'ওয়েট লিস্টে' ছিল না। হঠাৎ করে তাঁর নাম চলে এল একেবারে এক নম্বরে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক নিয়োগের (তফশিলি জাতি, মহিলা) মেধাতালিকায় এমনই 'চমকপ্রদ' ঘটনাকে কেন্দ্র করে হইচই পড়ে গিয়েছে শিক্ষক মহলে।

এক নম্বরে যাঁর নাম রয়েছে তিনি আবার সদ্য ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া এক নেতার মেয়ে বলে অভিযোগ। মেধাতালিকা প্রকাশের পর ওই প্রার্থীর নাম কী ভাবে এক নম্বরে বসে গেল, সে বিষয়ে কোনও উত্তর দিতে পারছে না স্কুল সার্ভিস কমিশন।

স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারপার্সন শর্মিলা মিত্র বলেন, "আমি বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে পারব না। আপনাকে একটা নম্বর দিচ্ছি ফোন করুন।" তাঁর পরামর্শ মতোই কমিশনের অ্যাডভাইসরি কমিটির এস পি সিংহকে ফোন করা হলে তিনিও বিষয়টি এড়িয়ে যান। তাঁর বক্তব্য, "আমি জানি না। জানলে বলব। পরে ফোন করুন।"এভাবেই এখন কমিশনের অধিকারিকেরা একে অপরের দিকে বল ঠেলতেই ব্যস্ত।



ঠিক কী নিয়ে বিতর্ক?
তালিকা প্রকাশের পর স্কুল সার্ভস কমিশনের 'ওয়েট লিস্টে' এক নম্বরে নাম ছিল ববিতা বর্মন, (রোল নম্বর: ২২২২১৬২৭০০০৭২০)। দু'দিন পর ওই প্রার্থীর নাম এক নম্বর থেকে সরে যায়। সেই জায়গায় নাম ওঠে অঙ্কিতা অধিকারীর (রোল নম্বর: ২২২২১৬২৭০০০২২০)। অঙ্কিতা অধিকারীর নাম এক নম্বরে চলে আসায়, প্রত্যেকেরই তালিকা থেকে নাম পিছিয়ে গিয়েছে। ফলে যখন 'ওয়েট লিস্ট' থেকে কোনও প্রার্থীর নাম নেওয়া হবে, প্রথমে সুযোগ পাবেন অঙ্কিতাই। এর ফলে বাকিদের প্রত্যেকেই পিছিয়ে গিয়েছেন। তাঁরা চাকরির জন্য কাউন্সিলিংয়ের ডাক না-ও পেতে পারেন। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভে ফুঁসছেন প্রার্থীরা।

তাঁদের অভিযোগ, 'ওয়েট লিস্ট'-এর পাশাপাশি 'এমপ‍্যানেলড' তালিকাও প্রকাশ হয়েছে। অঙ্কিতাকে যদি 'রিকল' করাও হয়ে থাকে, তাহলে তাঁর নাম ওয়েট লিস্টে থাকার কথা নয়। এটা ইচ্ছাকৃতভাবেই করা হয়েছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, যাঁর নাম উঠেছে, তিনি প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা পরেশ চন্দ্র অধিকারীর মেয়ে। সদ্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন পরেশবাবু। তারই ফল পাচ্ছেন। সম্প্রতি তৃণমূল ভবনে দলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে যোগ দিয়েছিলেন কোচবিহারের এই ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কোচবিহারে স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগের 'ওয়েট লিস্টে' নাম উঠে গেল মেয়ের। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক শ্রীজন ভট্টাচার্য বলেন, ''এই ধরনের দুর্নীতি নিয়ে অবিলম্বে তদন্ত হোক। কার মদতে মন্ত্রীর মেয়ের নাম এক নম্বরে  চলে গেল।'' ওই ঘটনার দোষীদের শাস্তিও দাবি করেন শ্রীজন।

তবে যে নেতাকে ঘিরে বিতর্ক সেই পরেশ অধিকারীকে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি।

মেধাতালিকা প্রকাশের আগেই কাউন্সেলিংয়ের বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে আগেই জটিলতা তৈরি হয়। কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলাও হয়। তার পরই হাইকোর্ট স্কুল সার্ভিসে নিয়োগের আগে মেধাতালিকা প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছিল। ফের দুর্নীতির অভিযোগ আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছেন চাকরি প্রার্থীরা। ৩১ অগাস্ট আচার্য সদনে কাউন্সেলিংয়ের হওয়ার কথা।