পিগি ব্যাঙ্কের টাকা দান, কেরালার পাশে কলকাতার চার বছরের পাখিও


বয়স মাত্র চার। জগৎ সংসার সম্পর্কে কতটুকুই বা বোঝে সে? কিন্তু টেলিভিশনের পর্দায় কেরালের বানভাসি অসহায় মানুষদের দুরাবস্থার ছবি দেখে একরত্তি মেয়েটির চোখের কোণায় জল চলে এসেছিল। তার পরেই সে মনে মনে ঠিক করে ফেলে, নিজের জমানো টাকা দিয়ে ওই সব মানুষকে সাহায্য করবে। 

সে মানে যাদবপুরের অপরাজিতা ওরফে পাখি সাহা। তার নিজের টাকা বলতে পিগি ব্যাঙ্কে জমানো টাকা। জন্মদিনে-পুজোয়-নববর্ষে উপহার বাবদ সে যা টাকা পেয়েছিল, সেটাই পিগি ব্যাঙ্কে জমিয়ে রেখেছিল পাখি। জমতে জমতে তার পরিমাণ হয়েছিল ১৪ হাজার ৮০০ টাকা। নিজের কথা না ভেবে সেই পুরো টাকাটাই সে বুধবার তুলে দিল কেরালের বন্যাদুর্গত মানুষদের জন্য।

কয়েক দিন আগে তামিলনাড়ুর ভিল্লুপুরমের চার বছরের মেয়ে অনুপ্রিয়া সাইকেল কেনার জন্য জমিয়ে রাখা ন'হাজার টাকা তুলে দিয়েছিল কেরালার বন্যাত্রাণে। 

পাখিকে নিয়ে এ দিন তার বাবা অরিজিৎ সাহা হাজির হন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। সেখানেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর হাতে নিজের পিগি ব্যাঙ্কটা তুলে দেয় পাখি। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান পাখির কাছে জানতে চান, 'তুমি এই টাকা কাদের জন্য দিচ্ছ?' কোনও জড়তা ছাড়াই পাখি বলে, 'কেরালার দিদিদের জন্য। আমি টিভিতে দেখেছি, ওখানে অনেক বৃষ্টি হয়েছে। ওদের বইখাতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।' যাদবপুরের কারমেল স্কুলের নার্সারির ছাত্রী পাখির কথা শুনে অবাক হয়ে যান প্রবীণ সিপিএম নেতারাও। 

চার বছরের পাখি যেমন, তেমনই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী শ্যামল সেনগুপ্ত এগিয়ে এসেছেন কেরালার বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে। তিনি নিজের জমানো টাকা ভেঙে মোট ৫১ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন। 

যাদবপুরের একদল যুবক আবার মঙ্গলবার রাতে দু'টি গাড়ি বোঝাই ওষুধপত্র নিয়ে কেরালা রওনা হয়েছেন। ওই দলের অন্যতম সদস্য, যাদবপুর লাগোয়া সন্তোষপুরের বাসিন্দা অভিষেক দাস ফোনে জানান, সব মিলিয়ে প্রায় দু'লক্ষ টাকার ওষুধ তাঁরা নিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন জীবনদায়ী ওষুধ ছাড়া মহিলাদের স্যানিটারি ন্যাপকিনও রয়েছে। তা ছাড়া, ওই দলে রয়েছেন বিদ্যুৎ-কাঠ-কলের মিস্ত্রি। তাঁরাও কেরালার এই দুঃসময়ে ত্রাণ ও পুনর্গঠনের কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চান। 

ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেরালার ত্রাণে হাত বাড়িয়েছেন শহরের কলেজ শিক্ষকদের একাংশ। পাঁচলা কলেজের শিক্ষক সঙ্ঘমিত্রা দাস বলেন, 'বুধবারই প্রচুর সংখ্যক স্যানিটারি ন্যাপকিন, শুকনো খাবার, খাতা, জলের পাউচ-সহ ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে কেরালায়। পুরুলিয়ার একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী এক দিনের মধ্যে বিপুল সংখ্যক স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করে আমাদের পাঠিয়েছে।' ভিন রাজ্যে থাকা এই শহরের বিজ্ঞানীদের অনেকেও কম্বল, টুথপেস্ট, টুথব্রাশ ও অন্তর্বাস কেরালায় পাঠিয়েছেন।