চন্দ্রবোড়ার ছোবল খেয়েও ৯৬ ঘণ্টা পাড়ি যুবকের


ক্যানিং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে মধুসূদন।

কর্নাটকে কাজ করতে গিয়ে সাপের ছোবল খেয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার বাসিন্দা মধুসূদন সর্দার। সেখানের কোনও হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে তাঁকে ট্রেনে চাপিয়ে ক্যানিংয়ে নিয়ে এলেন তাঁর সঙ্গীরা। প্রায় ৯৬ ঘণ্টা পরে ক্যানিং হাসপাতালে শুরু হল তাঁর চিকিৎসা। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এতটা সময় নষ্ট হওয়ার জন্য মধুসূদনের অবস্থা সঙ্গীন। তাঁকে সিসিইউতে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে ৩০টি এভিএস।

কিন্তু কেন কর্নাটকের কোনও হাসপাতালে যাননি মধুসূদনের সঙ্গীরা?   
মধুসূদনের স্ত্রী কবিতা বলেন, ''ওঁদের কাছে বেশি টাকা ছিল না। তাই স্থানীয় এক কবিরাজের ওষুধ খাইয়ে তাঁরই কথামতো বাড়ি নিয়ে আসার জন্য ট্রেনে উঠেন অন্যরা। ট্রেনে রক্তবমি করতে থাকলে আমাদের ফোনে খবর দেওয়া হয়।''

রোগীর আত্মীয় সাধন সর্দার বলেন, ''সাপে কামড়ানোর পর ওরা যদি আমাদের জানাত, তাহলে কাছাকাছি কোনও হাসপাতালেই যেতে বলতাম। কিন্তু ওরা ট্রেনে উঠে জানানোয় আর কিছু করার ছিল না।'' চিকিৎসকেরাও জানিয়েছেন, সাপের কামড়ের চিকিৎসা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার জন্যই এই কাণ্ড ঘটেছে।

গোসাবার অ্যানপুরে বাড়ি মধুসূদনের। ধান রোয়ার কাজে কর্নাটকের বেল্লারি জেলার কপুর গ্রামে গিয়েছিলেন কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গীরা জানিয়েছেন, গত বুধবার মাঠে কাজ করার সময়ে তাঁর ডান হাতে সাপ কামড়ায়। মোবাইলে সাপটির ছবি তুলে রাখেন সঙ্গীরা। মাঠ থেকে হাসপাতাল অনেকটা দূরে। তাঁদের কাছে বেশি টাকা না থাকায় সঙ্গীরা মধুসূদনকে স্থানীয় এক কবিরাজের কাছে নিয়ে যান। কবিরাজ কিছু জড়িবুটি দেন। 

সঙ্গীরা জানিয়েছেন, মধুসূদনকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বলেন ওই কবিরাজই। সেই মতো ৩ ঘণ্টা অটোয় করে এসে বেল্লারি স্টেশনে েথকে অমরাবতী এক্সপ্রেসে ওঠেন মধুসূদনের তিন সঙ্গী। ট্রেনে মধুসূদনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। রক্তবমি শুরু হয়। সঙ্গীরা ভয় পেয়ে তখন বিষয়টি মধুসূদনের আত্মীয়দের জানান।

ক্যানিংয়ের তালদির বাসিন্দা মধুসূদনের এক আত্মীয় সাধন সর্দার এই খবর পেয়ে ক্যানিংয়ের যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর পরামর্শ মতো রবিবার মধুসূদনকে ক্যানিংয়ে নামিয়েই যুক্তিবাদী সংস্থার অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। মোবাইলে তোলা সাপের ছবি দেখে এই সংস্থার সদস্যরা বুঝতে পারেন, সাপটি চন্দ্রবোড়া। ওই সংস্থার তরফেই ক্যানিং হাসপাতালে যোগাযোগ করে মধুসূদনকে সেখানে ভর্তি করানো হয়।

হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, চন্দ্রবোড়ার বিষ রক্তকণিকা ভেঙে দেয়, কিডনি নষ্ট করে। কিডনি কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেললে রোগীর মৃত্যু হয়।কিন্তু মধুসূদন বিষের সঙ্গে এতক্ষণ যুঝলেন কী করে? চিকিৎসকরা জানান, এ ক্ষেত্রে রোগীর রক্তকণিকা ভাঙতে শুরু করলেও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। চন্দ্রবোড়া কামড়ালে অনেক সময় ৪-৫ দিন পর্যন্তও কেউ কেউ বাঁচতে পারেন। তবে সেটা রোগীর শারীরিক গঠনের উপরই নির্ভর করে। নির্ভর করে সাপটি কতটা বিষ শরীরে ঢালতে পেরেছে তার উপরেও।

ক্যানিং যুক্তিবাদী সংস্থার সম্পাদক বিজন ভট্টাচার্য বলেন, ''আমরা সব সময় বলি, সাপে কামড়ানোর সঠিক চিকিৎসা হাসপাতালেই হয়। কিন্তু এ বিষয়ে এখনও মানুষের অজ্ঞতা আছে। এই অজ্ঞতা দূর করার জন্য সরকারি ভাবে আরও প্রচার দরকার।''