বধূবেশে তরুণীর নগ্ন ছবি তুলে বিপদ! মৃত্যু হুমকি পেয়ে পুলিসের দ্বারস্থ ফটোগ্রাফার


কল্পনাও করতে পারেননি, একটা ছবি তুলে মৃত্যু হুমকি পর্যন্ত পেতে পারেন! গত ৪৮ ঘণ্টা ঘুম নেই। নাওয়া-খাওয়াও বন্ধ। ফোন ধরতে ভয় পাচ্ছেন। চেনা পরিচিত ছাড়া কাওর ফোনই রিসিভ করছেন না। মৃত্যু ভয়ে কার্যত থরহরি কম্প অবস্থা প্রীতমের। স্বাভাবিক থাকেই বা কী করে? একের পর এক উড়ো ফোন আসছে ওর মোবাইলে। কেও বলছে মেরে ফেলবে, কেও হুমকি দিচ্ছে মাথা কেটে নেওয়ার! এমন জীবন বিপন্ন অবস্থায় পেশাদার ওয়েডিং ফটোগ্রাফার দ্বারস্থ হয়েছেন লাল বাজারের সাইবার সেলে। আজ (শুক্রবার) কলকাতা পুলিসের সদর দফতরে গিয়ে অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন প্রীতম মিত্র। ফটোগ্রাফারের সব কথা শোনার পর তদন্তও শুরু করেছে সাইবার সেলের অফিসাররা। 

ঘটনার সূত্রপাত হয় দিন দুয়েক আগে। পাঁচ বছর ওয়েডিং ফটোগ্রাফির পেশায় থাকা প্রীতমের একটি ছবি বং ক্রাশ নামের এখটি ফেসবুক পেজে পোস্ট হতেই তা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। ওই ছবিতে দেখা যায় এক তরুণী নগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে। মুখ ঢাকা রয়েছে পান পাতায়। স্রেফ উঁকি দিচ্ছে তরুণীর কাজল কালো চোখ। কপালে লাল টিপ, মাথায় বধূ সাজের মুকুট। এলোকেশী তরুণীর হাতে গাছকৌটো। আর সেটা দিয়ে তিনি ঢেকে রেখেছেন যৌনাঙ্গ। এই ছবি পোস্ট হওয়া মাত্রই শুরু হয় তর্জা। 

অনেকেই এই ছবির প্রশংসা করে তর্কে নামেন। 'বাহ, কেমন দিয়েছে দেখেছিস। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মুখে একেবারে ঝামা ঘষে দিয়েছে'। কেবল তরুণরাই নয়, অনেক তরুণীও প্রীতমের ভাবনাকে বাহবা দিয়ে তাঁর ছবিশৈলীকে শেয়ার করেছেন নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের দেওয়ালে। অনেকেই আবার তীব্র ভর্ত্সনাও করেছেন। শিল্পের নাম করে নোংরামো! এমনও কটাক্ষ জুটেছে আলোকচিত্র গ্রাহক প্রীতমের। তবে সবটাই ছিল বাকযুদ্ধ। সমস্যা শুরু, রাজ সরকার রিঙ্কু ('ওয়ার্কস এট হিন্দু প্রতিষ্ঠা') নামের এক যুবকের প্রোফাইলে ওই ছবি পোস্ট হওয়ার পর থেকে। ওই যুবকের প্রোফাইলে প্রীতমের তোলা ছবির সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয় 'হিন্দু ভাবাবেগ'কে। 'হিন্দু মা, বোনেদের নোংরা ছবি তোলা হচ্ছে। পুলিস প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেই নি'- এই ধরনের বয়ান লেখা হয় ফেসবুক পোস্টে। সঙ্গে প্রীতমের মাথার দামও ধার্য করা হয়। ব্যস! হু-হু করে ছড়িয়ে পরে পোস্টটি। এরপরই একের পর এক হুমকি ফোন পেতে থাকেন যাদবপুর নিবাসী চিত্রগ্রাহক প্রীতম।

বন্ধুরা পাশে এসে দাঁড়ালেও এখন তিনি একেবারে দিশেহারা। টানা ৪৮ ঘণ্টা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার পর অবশেষে পুলিস প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন প্রীতম। লাল বাজারের সাইবার সেলের তরফে বিষয়টি খতিয়ে দেখে শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহনেরও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।