গুপ্তধনের সন্ধানে! ঘরের মেঝের নীচেই নাকি 'লুকিয়ে' বহুমূল্য ধাতু, তারপর...


গ্রামের লোক রোজই দেখেন, রোহিত নন্দীর বাড়িতে ২ জন অপরিচিত ব্যক্তি গাঁইতি, কোদাল নিয়ে ঢুকছেন। কারা কোথা থেকে আসছেন? কেন আসছেন? জিজ্ঞেস করলেই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন রোহিত নন্দী। আর তাতেই সন্দেহটা আরও গাঢ় হয়। শেষমেশ সটান বাড়ির ভিতর ঢুকতেই নাটকের যবনিকা পতন। পর্দাফাঁস হল আসল ঘটনার। জানা গেল, বাড়ির ভিতর গুপ্তধনের খোঁজ চলছে। আর সেকারণেই ঘরের মেঝেতে কাটা হয়েছে ২০ ফুটের বিশাল সুড়ঙ্গ।

বাঁকুড়ার কোতলপুরে চাতরা গ্রামের বুটবাড়ি এলাকায় বাড়ি রোহিত নন্দীর। পেশায় কৃষিজীবী রোহিত নন্দীর বাড়িতে দিন পনেরো আগে ২ জন অপরিচিত ব্যক্তি আসেন। নিজেদেরকে হুগলীর কামারপুকুরের বাসিন্দা বলে দাবি করেন অগুন্তকদ্বয়। এরপরই রোহিত নন্দীকে চমকে দিয়ে তাঁর কাছে এক অদ্ভূত দাবি করেন তাঁরা। রোহিত নন্দীকে তাঁরা বলেন, বাড়ির মেঝের ১৫ মিটার নীচে বহুমূল্য ধাতু লুকিয়ে রাখা আছে। খোলা বাজারে যার দাম কয়েক কোটি টাকা। অবিলম্বে ওই গুপ্তধন গোপনে বের করে না নিলে, সরকার সবটা হস্তগত করে নেবে। তখন আর কিছুই পাবেন না রোহিত নন্দী।

আগুন্তকরা রোহিত নন্দীকে আশ্বাস দেন, ওই ধাতু তুলতে পারলে রোহিত নন্দীকে একটি পাকা বাড়ি করে দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে দেওয়া হবে প্রচুর পরিমাণে টাকা। কিন্তু পুরো কাজটাই খুব গোপনে করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন অপরিচিত ওই ব্যক্তিদ্বয়। গুপ্তধন, পাকা বাড়ি, সঙ্গে টাকা- সব শুনে আর লোভ সামলাতে পারেননি রোহিত নন্দী। আগুন্তকদের কথায় রাজি হয়ে যান বাড়ির মধ্যে সুড়ঙ্গ খুঁড়তে।

অনুমতি মিলতেই 'গুপ্তধনের সন্ধানে' আসরে নেমে পড়েন আগুন্তক ব্যক্তিদ্বয়। শুরু হয় ঘরের মেঝেতে খোঁড়াখুঁড়ি। প্রায় দিন ১৫ ধরে এই খোঁড়াখুঁড়ি পর্ব চলে। বাড়ির বাইরে অংশ অক্ষত রেখে অন্তত সন্তর্পণে ঘরের মধ্যে ২০ ফুটের বিশাল গর্তও খোঁড়া হয়ে যায়। বাইরে থেকে কেউ যাতে বুঝতে না পারে, সেজন্য গর্তের মাটি বস্তা বন্দি করে রাখা হয় উঠোনের মধ্যেই। কিন্তু শেষমেশ গ্রামবাসীদের তত্পরতায় পুলিসের জালে ধরা পড়ে অভিযুক্তরা।

রোহিত নন্দীর কাছ থেকে সন্তোষজনক উত্তর না পেয়েই সটান বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়েন স্থানীয়রা। দেখেন, ঘরের মধ্যে খোঁড়া হয়েছে সুবিশাল সুড়ঙ্গ। গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পরেও হাল ছাড়েননি ওই ২ ব্যক্তি। গ্রামবাসীদেরও একইরকমভাবে গুপ্তধনের লোভ দেখান তাঁরা। বহুমূল্য ধাতু মিললেই গ্রামের উন্নয়নের জন্য ২ কোটি টাকা দেওয়ার প্রলোভনও দেখানো হয়। যদিও তাতে গলেনি গ্রামবাসীদের মন।

এলাকাবাসীরাই কোতলপুর থানায় খবর দেন। পুলিস এসে আটক করে অভিযুক্ত ২ ব্যক্তিকে। আটক করা হয়েছে বাড়ি মালিক রোহিত নন্দীকেও।