ব্রিজ নেই, নদী পেরিয়ে স্কুলে যায় কাশ্মীরের খুদেরা


শ্রীনগর: শ'খানেক ছাত্র ছাত্রী৷ তাদের রোজনামচা স্কুলে যাওয়া৷ সেটা অবশ্য নতুন কিছু নয়৷ কিন্তু রূঢ় বাস্তবটা অন্য জায়গায়৷ প্রতিদিন এই ছাত্রছাত্রীদের খরস্রোতা নদী পেরিয়ে স্কুলে যেতে হয়৷

এই ছবি কাশ্মীরের রাজৌরি জেলার৷ লাদহোতো নদী পেরোতে হয় বাধ্য হয়ে, তাও বাধ্য হয়ে৷ কারণ এই নদীর ওপরে কোনও ব্রিজ নেই৷ সমস্যা বাড়ে বর্ষাকালে৷ নদীর তখন রুদ্রমূর্তি৷ সেই সময়ে স্কুলে যাওয়ার কোনও উপায় থাকেনা৷ দিনের পর দিন ক্লাস কামাই হয় তাদের৷

স্কুলের ছাত্র মহম্মদ আফতার জানায় এতে পড়াশোনার ক্ষতি হয় সমানে৷ ভারি বৃষ্টি হলে স্কুলে যেতে না পারার জন্য অন্যান্য পড়ুয়াদের থেকে পিছিয়ে পড়ে তারা৷ ফলে এর প্রভাব পড়ছে ভবিষত্যের ওপরেও৷ এখানেই যন্ত্রণার শেষ নয়৷ ঠিকমতো স্কুলে পৌঁছনোর কোনও রাস্তা নেই৷ প্রায় প্রতিদিনই তাদের দেরি হয় বলে জানিয়েছে আরেক ছাত্রী সাবিনা কৌসার৷ সে জানিয়েছে, যারা একটু বড়, তারা যদি কোনও রকমে নদী পেরিয়েও যায়, সমস্যা হয় ছোটদের নিয়ে৷

সাবিনার দুই ছোট ছোট ভাই বোন একই স্কুলে পড়ে৷ যাতায়াতও একই পথে৷ ফলে নদী পেরোতে হয় তাদেরও৷ অত ছোট বাচ্চাদের নিয়ে নদী পেরোনো দু:সাধ্য ব্যাপার বলে জানায় সাবিনা৷ প্রশাসনের কাছে আরজি যেন একটা অস্থায়ী হলেও, ব্রিজ বানিয়ে দেওয়া হয়৷ তবু সে আরজি স্বপ্নই থেকে যায়৷

নদী পেরিয়ে সরকারি স্কুল৷ সেই স্কুল ছাড়া আর কোনও স্কুল নেই এলাকায়৷ ফলে ছেলে মেয়েদের ভবিষত্যের জন্য নদী পেরিয়েই চলছে পড়াশোনা৷ তবু লড়াই চালাচ্ছে তারা৷ অসম জীবনযাত্রায় জয়ী হওয়ার যুদ্ধ চলছে৷

রাজৌরি জেলার উপ জেলাশাসক মহম্মদ আজিজ জানান ব্রিজ তৈরির প্রকল্প রয়েছে সরকারের৷ তবে কিছুটা সময় লাগবে৷ একবার ব্রিজ তৈরি হয়ে গেলে ছেলেমেয়েদের আর কোনও সমস্যা থাকবে না৷ কিন্তু এউ প্রতিশ্রুতি কবে পূরণ হবে, তা জানে না এই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা৷

একই ছবি কিছুদিন আগে দেখা গিয়েছিল কর্ণাটকের চিকমাগালুরে৷ সেখানেও প্রতিদিন জীবন বাজি রেখেই মানুষকে নিত্য দিনের কাজ সারতে হয়৷ নদী পার করার একটিই মাত্র উপায় ভাঙা ব্রিজ৷ গ্রামের বাসিন্দারা কাঠের সেই ভাঙা পাটাতনের ওপর দিয়েই দোকান বাজার যাওয়া বা নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় কাজ করে চলেছেন৷ যখন তখন পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে এই ব্রিজ৷ আর তেমনটা ঘটলে তা ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটাবে৷

এদিকে বর্ষা কাল চলছে৷ ভারী বৃষ্টির কারণে ব্রিজের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে৷ এসময় নদী উপচে পড়ছে জলে৷ তার মধ্যেই গ্রামের মানুষ নৌকায় করেও পার হচ্ছেন৷ বর্ষার কারণেই স্বাভাবিক ভাবেই জলস্তর বেড়ে যায় এই নদীর৷ ফলে জীবনের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়৷