গোয়েন্দাদের জালে JMI চিফ বোমারু মিজান

বোমারু মিজান
     
কলকাতা : কর্নাটকের রামাগাড়া থেকে ধৃত মণিরুল আর কেউ নয়, জাইদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান। সে ভারতে কাজ করছিল জামাত-উল-মুজাহিদিন ইন্ডিয়ার (JMI) প্রধান হিসেবে। যদিও এদেশে তার ছদ্মনাম কওসর। জামাত-উল-মুজাহিদিন প্রধান সালাউদ্দিন সংগঠনের ভারতীয় শাখার দায়িত্ব দিয়েছিল বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ মিজানকে। কর্নাটকের কোলারের একটি টেকনোলজি ইন্সটিটিউটে চাকরি নিয়ে সংগঠনের মডিউল তৈরির কাজ গোপনে চালিয়ে যাচ্ছিল সে। কিন্তু, শেষ রক্ষা হল না। NIA-এর হাতে ধরা পড়ল সে। তার গ্রেপ্তারির খবর পেয়েই তৎপর হয়েছে কলকাতা পুলিশের STF ও কলকাতার গোয়েন্দারা। তাকে জেরা করে জামাত-উল-মুজাহিদিন ইন্ডিয়ার যাবতীয় তথ্য পেতে চায় তদন্তকারীরা।

শুক্রবার কেরালার মালাপ্পুরমের একটি বাঙালি শ্রমিক কলোনি থেকে দু'জনকে গ্রেপ্তার করে NIA। বুদ্ধগয়া বোমা বিস্ফোরণ মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। নাম আবদুল করিম (১৯) ওরফে ছোট্টা এবং মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে তুহিন। ছোট্টার বাড়ি মুর্শিদাবাদের ইলিজাবাদে। আর তুহিন বীরভূমের বাসিন্দা। তুহিন JMI-এর অন‍্যতম মাথা। সে বিস্ফোরক বানাতে ওস্তাদ। খোদ মিজান তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলে খবর। মিজান তুহিনের উপর অনেকটাই নির্ভর করত। একমাত্র সেই জানত মিজানের অবস্থান। তাকে জেরা করেই বোমারু মিজানের খোঁজ পায় NIA। তারপরই গতকাল বেঙ্গালুরু থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের রামাগাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মিজানকে। চলতি বছরেই সে রামাগাড়ায় আসে। আমির খান নামে সেখানকার এক বাসিন্দার বাড়িতে ভাড়ায় থাকত সে। তার কাছে বোমা বানানোর সার্কিট, বিস্ফোরক, ল‍্যাপটপ উদ্ধার হয়েছে।

NIA সূত্রে খবর, কেরালায় তুহিন এবং ছোট্টাকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে কোচিতে বিশেষ আদালতে তোলা হয়। ৪ দিনের ট্রানজ়িট রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হয় পটনায়। সেখানে NIA-এর বিশেষ আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের NIA হেপাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। এরপরই তাদের জেরা করে মিজানের খোঁজ পাওয়া যায়। জানা যায় মিজান বেশ কয়েকবার কেরালায় এই শ্রমিক কলোনিতে গিয়েছিল। 

শুধু বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণ মামলাই নয়। মিজান খাগড়াগড় কাণ্ডেরও মূল অভিযুক্ত। একটা সময় তার ১০ লাখ টাকা মাথার দাম ঠিক করে পোস্টার দেয় NIA। কিছুতেই তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সূত্রের খবর, এর মাঝে বসে থাকেনি মিজান। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, মালদা সহ একাধিক জায়গায় তৈরি করেছে জামাত-উল-মুজাহিদিন ইন্ডিয়ার মডিউল। 

২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ত্রিশাল ও ভালুকার মাঝামাঝি সাইনবোর্ড এলাকায় ফিল্মি স্টাইলে দিনেদুপুরে প্রিজ়নভ্যানে হামলা চালায় JMB-র সদস্যরা। গুলি ও বোমা ফাটিয়ে সাজাপ্রাপ্ত JMB শীর্ষনেতা সালাউদ্দিন ওরফে সালেহিন, জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান এবং রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদকে ছিনিয়ে নেয় তারা। ওইদিন একটি মামলায় হাজির করার জন্য তাদের ময়মনসিংহের আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সূত্রের খবর, এরপরই তারা লুকিয়ে ভারতে চলে আসে। তারপর সেই বছরের ১০ অক্টোবর ঘটে খাগড়াগড় কাণ্ড। এর আগে ওই ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

মিজানকে গ্রেপ্তার করার পর গোয়েন্দাদের অনুমান, জামাতের জাল অচিরেই কাটতে পারবে তারা। বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণকাণ্ডে উল্লেখযোগ‍্য কাজ করেছিল STF। সেই সূত্রে এবং আরও কয়েকটি মামলায় মিজানের নাম থাকায় STF তাকে জেরা করতে চায়। সূত্রের খবর, সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা। পাশাপাশি মিজানকে কলকাতায় আনার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে।