অসম NRC নিয়ে উত্তাল গোটা দেশ, জানেন কী এই NRC?


নয়াদিল্লি: এনআরসি ঘিরে উত্তাল দেশ। কিন্তু, কী এই এনআরসি? কেন এত বিতর্ক? এনআরসি তালিকায় নাম না উঠলে কী হবে? এই প্রশ্ন শুধু রাজনীতির অন্দরমহলে নয়, এখন চায়ের আড্ডা থেকে মিটিং বোর্ডরুমের মূল আলোচ্য বিষয় ৷

তালিকায় নাম আছে না নেই? এ নিয়ে উত্তাল অসম। ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্স - অসমের এই জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে দেশ জুড়ে শোরগোল। এই জাতীয় নাগরিকপঞ্জি আসলে কী?

ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্স অর্থাৎ NRC মানে এটি রাজ‍্যের বৈধ নাগরিকদের তালিকা ৷ প্রথমবার এই তালিকা তৈরি হয় ১৯৫১ সালে ৷ ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এই তালিকা নবীকরণের কাজ শুরু হয় ৷ ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে অসমে আসা ব্যক্তি ও তাঁদের বংশধরদের নামই এনআরসিতে উঠবে বলে জানানো হয় ৷ ২০১৫ সালে এনআরসি নবীকরণের কাজ শুরু হয় ৷ কয়েক দফায় তারিখ পিছোনোর পরে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম খসড়া প্রকাশিত হয় ৷ দ্বিতীয় খসড়া তালিকা প্রকাশিত হল সোমবার অর্থাৎ ৩০ জুলাই, ২০১৮ ৷

এই দ্বিতীয় তালিকায় ৪০ লক্ষের নাম ওঠেনি। আফগানিস্তান, ইরাক বা সিরিয়ার মতো গৃহযুদ্ধ নেই। অথচ, কলমের খোঁচায় আচমকাই নাগরিকত্ব হারানোর মুখে ৪০ লক্ষ মানুষ। অসমের খসড়া নাগরিকপঞ্জি-তে চল্লিশ লাখ মানুষের নামের পাশে লালকালির দাগ। কার্যত রাতারাতি ভারতীয় নাগরিকত্ব হারানোর পথে তাঁরা। নাগরিক পঞ্জিতে নাম তোলার জন্য আবেদন করেন ৩ কোটি ২৯ লক্ষ মানুষ ৷ তালিকায় প্রকাশিত হয়েছে ২ কোটি ৮৯ লক্ষ মানুষের নাম ৷ কার্যত রাতারাতি উদ্বাস্তু ৪০ লক্ষ মানুষ ৷ বাকিরা যাবেন কোথায়? ঘিরে ধরছে অনিশ্চয়তা আর দেশছাড়া হওয়ার আশঙ্কা।

যাদের নাম খসড়া নাগরিকপঞ্জিতে ওঠেনি তাদের কী হবে?

বিজেপি শাসিত অসম সরকার ও এনআরসি কর্তৃপক্ষের দাবি, যাঁদের নাম দ্বিতীয় তালিকাতেও ওঠেনি, তাঁরা আরও একবার নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ পাবেন।

জাতীয় নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে এ বছর ডিসেম্বরে। সেই তালিকায় কারও নাম না থাকলে কী হবে? জানা যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে ফরেনারস ট্রাইব‍্যুনাল এবং সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো যাবে ৷

তারপরেও যদি তালিকায় নাম না ওঠে? সেক্ষেত্রে তাঁর ভবিষ্যৎ ঘিরে ঘোর অনিশ্চয়তা ৷ কোনও দেশই যদি তাঁদের আশ্রয় না দেয়, তখন ঠিকানা কি হবে ডিটেনশন ক‍্যাম্প? না কি দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দেওয়া হবে? এ সব বিষয় নিয়ে এখনও রয়েছে ধোঁয়াশা।

এই অসম নাগরিকপঞ্জির ইস্যুতে উত্তাল জাতীয় রাজনীতি ৷ কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দেগেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ পিছিয়ে নেই কংগ্রেস, বাম সহ বাকি বিরোধীরাও ৷ NRC নিয়ে ক্রমাগত চড়ছে রাজনীতির পারদ ৷ শাসক ও বিরোধীর মন্তব্য-পাল্টা মন্তব্যে উত্তাল সংসদ ৷

অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, অসমে নাগরিকপঞ্জির দ্বিতীয় খসড়ায় যে চল্লিশ লক্ষ মানুষের নাম নেই, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না। বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং বিচারপতি রোহিংটন নরিম‍্যানের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার নির্দেশ দিয়েছে, চল্লিশ লক্ষ মানুষ তালিকায় নাম তুলতে যেন ঠিক মতো সুযোগ পায়। এনআরসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তা নিশ্চিত করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। যাঁদের নাম তালিকায় ওঠেনি, তাঁরা ৮ অগাস্ট থেকে নিজেদের দাবিদাওয়া ও অভিযোগ জানাতে পারবেন। যা খতিয়ে দেখা হবে ৩০ অগাস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তালিকা থেকে বাদ পড়াদের দাবি ও অভিযোগ কোন পদ্ধতিতে খতিয়ে দেখা হবে তাও কেন্দ্রকে জানাতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। আজকের শুনানিতে এনআরসি কর্তৃপক্ষের তরফ জানানো হয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করা হবে, এই তথ‍্য ঠিক নয়। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দিনক্ষণ ঠিক করবে শীর্ষ আদালতই।

তাতেও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না রাতারাতি নিজভূমে পরবাসী হয়ে যাওয়া বিপুল সংখ্যক মানুষ ৷ রাজনীতি ও আইনি মারপ্যাঁচের মাঝে দেশছাড়া হওয়ার ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন অসমের ৪০ লক্ষ পরিচয় হারানো মানুষ ৷