‘SIM Swap’ জালিয়াতি থেকে সাবধান, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মুহূর্তেই লোপাট হতে পারে সব টাকা !


কলকাতা: এটিএম জালিয়াতি নিয়ে এখন আতঙ্কে ভুগছেন শহরবাসী ৷ কসবা থেকে গড়িয়াহাট, দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন এটিএমেই ওৎ পেতে রয়েছে জালিয়াতরা ৷ সম্প্রতি কলকাতা থেকেই গ্রেফতার হয়েছে দুই রোমানিয়ান যুবক ৷ যারা এই এটিএম কাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ ৷ কেন বারবার এমন ঘটনা ঘটছে এটিএমগুলিতে ? কেন এত কাণ্ডের পরেও আরও বেশি তৎপর হচ্ছে না ব্যাঙ্কগুলি ৷ সেটাই এখন প্রশ্ন আমআদমির মধ্যে ৷
কেউ ব্যাঙ্ক জালিয়াতির শিকার হলে হারানো টাকা তাঁকে ফেরত দেওয়া হবে ৷ ব্যাঙ্কগুলির তরফে এমন আশ্বাস দেওয়া হলেও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না গ্রাহকরা ৷ কারণ কখন কে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে, সেই খবর কারোর পক্ষেই সবসময় রাখা সম্ভব নয় ৷ অনেকসময়েই টাকা ডেবিট হওয়ার পর কোনও এসএমএস আসে না ব্যাঙ্কের তরফে ৷ তাই বেশ কয়েকদিন পর পাসবুক আপডেট করলে হয়তো ব্যালেন্স দেখে আঁতকে উঠতে হচ্ছে যাঁরা জালিয়াতির শিকার হচ্ছেন ৷ কিন্তু শুধুই কি যাঁরা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করেন কিংবা নেট ব্যাঙ্কিং করেন, তাঁরাই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ? উত্তরটা হয়তো 'না' ৷ কারণ মোবাইল সিমের মাধ্যমেও জালিয়াতির শিকার হতে পারেন কোনও গ্রাহক ৷ যাকে বলা হচ্ছে 'সিম সোয়্যাপ ফ্রড' ৷

কী এই 'SIM SWAP' জালিয়াতি ?
আপনার কাছে ডেবিট বা কার্ড থাকুক বা না থাকুক ৷ আপনি টাকা তোলার জন্য হয়তো এটিএম ব্যবহার করেনও না ৷ কিন্তু তাতেও ব্যাঙ্ক জালিয়াতদের থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাচ্ছেন, তা কিন্তু নয় ৷ কারণ হল আপনার ফোন নম্বর ৷ যা আপনার সব ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টের সঙ্গেই রেজিস্টার্ড থাকে ৷ যা থেকেই জালিয়াতরা নতুন উপায় বের করেছে টাকা হাতানোর ৷ আপনার নম্বরের ডিটেলস থাকতে পারে প্রতারকদের কাছেও ৷ কোনও টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডারের কাস্টমার সার্ভিস অফিসার সেজে সে আপনাকে ফোন করে আপনার থেকে নানা তথ্য জানতেই পারে ৷ সাধারণ ফোনে প্রতারক নিজেকে কাস্টমার সার্ভিস অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে আপনাকে বলতে পারে সিম কার্ডে কিছু সমস্যা রয়েছে, আপগ্রেড করার প্রয়োজন রয়েছে ৷ সেই ব্যক্তি আপনাকে ২০ সংখ্যার একটা সিম কার্ড নম্বরও ওই সময় এসএমএস করতে পারে ৷ মনে রাখবেন, ওই সিমের সমস্ত কন্ট্রোল কিন্তু প্রতারকেই হাতেই রয়েছে ৷

প্রতারক আপনাকে বলতে পারে আপনার নম্বরটি পাঠাতে এবং '১' টিপে এসএমএসে কনফার্ম করতে ৷ সে আপনাকে এমনও বলতে পারে যে নতুন সিম কার্ড ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আপনি পেয়ে যাবেন ৷ ততক্ষণ আপনার ফোন ডিঅ্যাক্টিভেট থাকবে ৷ আর যেই আপনি '১' নম্বর প্রেস করবেন ৷ তৎক্ষণাতই আপনার সিম ডিঅ্যাক্টিভেট হয়ে যাবে ৷ আর তারপরেই আপনার সিম কন্ট্রোল করার সমস্ত অ্যাকসেস পেয়ে যাবে ওই প্রতারক ৷ আপনার ওই নম্বরের সঙ্গে যে যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি লিঙ্কড সেখানে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP) জেনারেট করে আপনার ব্যাঙ্কের থেকে টাকা লোপাট করার সমূহ সম্ভাবনা তখন কিন্তু রয়েছে ৷ আপনার নিজের সিম যেহেতু ডিঅ্যাক্টিভেট করা রয়েছে ৷ তাই সেই সমস্ত লেনেদেনের কোনওরকম এসএমএস  অ্যালার্ট আপনি পাবেন না ৷
জালিয়াতদের হাত থেকে বাঁচতে তাহলে কী করবেন ?

১. নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য কখনই কাউকে জানাবেন না
২. মনে রাখবেন ব্যাঙ্কের কাছে আপনার অ্যাকাউন্টের সমস্ত তথ্যই রয়েছে, তাই কোনও ব্যাঙ্কের কর্মী  আপনাকে আপনাকে ফোন করে তথ্য চাইবেন না ৷
৩. অজানা ওয়েবসাইটগুলিতে আপনার মোবাইল নম্বর দেবেন না ৷
৪. ফোনের মধ্যে কোনও সন্দেহজনক কিছু ঘটতে দেখলে আপনার মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারকে জানান ৷
৫. কোনও এসএমএস অ্যালার্ট বা ওটিপি কখনই কারোর সঙ্গে শেয়ার করবেন না ৷
৬. নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট মাঝেমধ্যেই চেক করুন ৷
৭. ব্যাঙ্কে গিয়ে আপনার অ্যাকাউন্টের সঙ্গে 'ইনস্ট্যান্ট অ্যালার্ট' রেজিস্টার করুন ৷ তাহলে সবসময় নিজের অ্যাকাইন্টের সব তথ্য জানতে পারবেন ৷
৮. কেউ ফোন করে সিম ব্লক করার কথা বললে সেই ফোন কেটে দিন ৷ মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারের কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন করছি বললেও পাত্তা দেবেন না ৷