‘মহার্ঘ ভাতা রাজ্যের মর্জির উপর নির্ভর করে না, এটা অধিকার’


মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) দেওয়া রাজ্য সরকারের ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে না, এটা সরকারি কর্মচারীদের অধিকার— শুক্রবার ডিএ মামলায় এমনই রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত ও বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চের যুক্তি, রাজ্য সরকার যখন রোপা-২০০৯ (রিভিশন অব পে অ্যান্ড অ্যালাওয়েন্স) আইন মেনে পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করেছে, তখন ডিএ অধিকার হিসেবেই গণ্য হওয়া উচিত।

গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল (স্যাট) জানিয়েছিল, ডিএ দেওয়া, বা না-দেওয়া রাজ্য সরকারের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। ওই বছরেরই মার্চ মাসে স্যাট-এর নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা করেছিল রাজ্য সরকারি কর্মীদের দু'টি সংগঠন। এ দিন স্যাটের সেই রায় খারিজ করার পাশাপাশি হাইকোর্ট আরও দু'টি বিষয় স্যাটকে পুনরায় খতিয়ে দেখতে বলেছে। প্রথমত, রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা কেন কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাবেন না। দ্বিতীয়ত, ভিন্‌ রাজ্যে কর্মরত এ রাজ্যের সরকারি কর্মীদের সঙ্গে রাজ্যে কর্মরত সরকারি কর্মীদের ডিএ-র ফারাক থাকবে কেন? এই দুই বিষয়ে রায় দেওয়ার জন্য স্যাট-কে দু'মাস সময় দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।

ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। তাঁদের অভিযোগ, কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের ডিএ-র ফারাক বাড়তে বাড়তে ৫০ শতাংশ ছুঁয়ে ফেলেছে। কেন্দ্র নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার পাশাপাশি নিয়মিত ভাবে ডিএ ঘোষণা করে। গত বুধবারই ২ শতাংশ ডিএ দেওয়ার কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। অন্য দিকে ষষ্ঠ বেতন কমিশন গঠনের পরে বহু দিন গড়িয়ে গেলেও তার সুপারিশ এখনও আসেনি রাজ্য সরকারি কর্মীরা পুরনো বেতনক্রমেই পড়ে আছেন। এই অবস্থায় আগামী বছর ১ জানুয়ারি থেকে তাঁদের ১০ শতাংশ অন্তর্বর্তিকালীন ভাতা-সহ ২৫ শতাংশ ডিএ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছে রাজ্য। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ-র পরিমাণ দাঁড়াবে ১২৫ শতাংশ। কিন্তু তার পরেও সমতুল পদে কর্মরত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীর সঙ্গে রাজ্যের কর্মচারীর বেতনের দুস্তর ফারাক থাকবে বলেই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের অভিযোগ। এ নিয়েই আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা।

এ দিন বেলা একটার কিছু পরে রায় ঘোষণার সময় বিচারপতি করগুপ্ত জানান, তাঁদের বেঞ্চের বিচার্য বিষয় ছিল তিনটি। প্রথমত, ডিএ সরকারি কর্মীদের অধিকার কি না। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রের সঙ্গে এ রাজ্যের সরকারি কর্মীদের ডিএ-র ফারাক থাকবে কি না। তৃতীয়ত, এ রাজ্যের যে সব সরকারি কর্মী দিল্লির বঙ্গ ভবন ও চেন্নাইয়ের যুব আবাসে কর্মরত, তাঁদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাওয়াটা রাজ্য কর্মরত সরকারি কর্মীদের প্রতি বৈষম্য বলে বিবেচিত হবে কি না।



ডিএ-কে 'অধিকার' আখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি বেঞ্চ বলেছে, কী কারণে ডিএ দেওয়া, বা না-দেওয়া রাজ্য সরকারের ইচ্ছাধীন, তার কারণ স্যাট জানায়নি। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ডিএ-র ফারাক নিয়ে স্যাটে কোনও নথি বা প্রস্তাব জমা দেয়নি রাজ্য সরকার। যার অর্থ, স্যাট ওই বিষয়টি বিচারই করেনি, বলেছে ডিভিশন বেঞ্চ।

তৃতীয় বিষয় সম্পর্কে রাজ্যের বক্তব্য ছিল, এক এক রাজ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার এক এক রকম। তাই অন্যত্র কর্মরত কর্মীদের কেন্দ্রীয় সরকারি হারে ডিএ দেওয়া হয়। সেই যুক্তি খারিজ করে ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, নির্দিষ্ট মূল্যসূচকের উপর ভিত্তি করে গোটা দেশে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের কর্মচারীদের একই হারে ডিএ দেয়। বেঞ্চের মতে, এই বিষয়টিও স্যাট বিচার করেনি।

সরকারি কর্মীদের সংগঠন 'কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ' এবং 'ইউনিটি ফোরাম'-এর হয়ে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলার সওয়াল করেছিলেন আইনজীবী সর্দার আমজাদ আলি। অর্থ দফতরের জনৈক কর্মী স্বপন দে-ও আপিল মামলায় যুক্ত হন। তাঁর হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।

ওই আইনজীবীরা জানান, ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, যে সব নথি স্যাটে এর আগে তারা জমা দেয়নি, তা এক সপ্তাহের মধ্যে সেখানে পেশ করতে।