বাসে পিষ্ট দুই পা, ১৯টি অস্ত্রোপচারে যুদ্ধ জয় তরুণীর

বাসের চাকায় পিষ্ট দুটো পা। ১৯টি অস্ত্রোপচার, ২৭ বোতল রক্ত আর হাসপাতালে ১০০ দিন লড়াইয়ের পর হাওড়ার ২৪ বছরের তরুণী দেবলীনা রায়কে সুস্থ হয়ে বাড়ি পাঠাল এসএসকেএম হাসপাতাল। 

১৫ জুন হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর মুখে ঘটে যাওয়া বাস দুর্ঘটনা সব সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে স্থান পেয়েছিল। প্রাণ হারান বছর উনত্রিশের উপমা মুখোপাধ্যায়। একই বাসের চাকায় গুরুতর আহত দেবলীনাকে উদ্ধার করা হলেও, তিনি যে প্রাণে বাঁচবেন, সে আশা করেননি নিজেও। হাসপাতালের আইটিইউতে শুয়ে বললেন, 'আমাদের বাস ব্রেক ফেল করেছিল। দেখলাম ড্রাইভার লাফিয়ে নেমে গেলেন। আমাদেরও নেমে যেতে বলা হয়। পাদানি থেকে ঝাঁপ দেওয়ার পর আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরল, দেখলাম চাকা থাইয়ের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে। স্ট্রেচারে করে যখন হাওড়া হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল, মনে হয়েছিল প্রাণটা তখনই বেরিয়ে যাবে।'

কোনও মতে বাবা, হাওড়ার প্রাক্তন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায়কে খবরটা দিতে পেরেছিলেন। প্রবল রক্তক্ষরণ হতে থাকা দেবলীনাকে অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই গ্রিন করিগর করে নিয়ে আসা হয় এসএসকেএমে। দেবাশিস বলেন, 'ওর শরীরে নীচের অংশের রক্তচাপ কমে এসেছিল। শিরার চোট মেরামতি করতে সে দিনই ভাস্কুলার সার্জারি করা হয়। তার পরপরই অস্থি এবং প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়।' প্রাথমিক ভাবে তরুণীর শারীরিক অবস্থা সামাল দেওয়া গেলেও সংক্রমণ হওয়ায় অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে কিছু দিনের মধ্যেই। ২৭ জুন স্থানান্তর করা হয় আইটিইউতে। দেবলীনার চিকিৎসক, আইটিইউ ইনচার্জ রজত চৌধুরী বলেন, 'ওর পায়ের মাংস বলে কিছু ছিল না। দুটো হাঁটু চুরচুর হয়ে গিয়েছিল। কোমরের হাড়, পায়ের একাধিক হাড় বাজে ভাবে ভেঙে গিয়েছিল। সাধারণ ভাবে পথ দুর্ঘটনায় ত্বক এবং নরম কোষগুলিতে সংক্রমণের ভয় থাকে। ওর ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছিল।'

আইটিইউতে যমে-মানুষে টানাটানির মধ্যেই আরও ১৬টি অস্ত্রোপচার করে ধীরে ধীরে মেরামতি করা হয় দেবলীনার একের পর এক ক্ষত। 'কড়া ডোজের অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গেই ড্রেসিংয়ের সময় প্লাস্টিক সার্জনরা ওর সোর্স ইনফেকশন কন্ট্রোল করেন। তাই প্রাণে বাঁচানো গিয়েছে মেয়েটিকে,' বলেন রজত। মাঝেরহাট ব্রিজ দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে এসে দেবলীনাকে দেখে যান মুখ্যমন্ত্রীও। চিকিৎসকদের চেষ্টা এবং মনের জোরে মৃত্যু ফাঁড়া কাটিয়ে ওঠেন স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বায়োটেকনোলজি এমএসসির এই ছাত্রী। আগের মতো হাঁটাচলা করতে আরও ছ'মাস থেকে এক বছর সময় লাগলেও, আপাতত বাড়ির মুখ দেখলেন তিনি। শনিবার হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার সময় বলেন, 'সুস্থ হয়ে উঠে পিএইচডি করার স্বপ্নটা পুরণ করতে চাই।' 

সঠিক সময় চিকিৎসা শুরু না-হওয়ায় পথদুর্ঘটনায় জখমদের মৃত্যুর খবর যখন শোনা যায় প্রায়শই, তখন দেবলীনার সুস্থ হয়ে ওঠা নিশ্চিত ভাবেই অনুপ্রেরণা জোগাবে।