‘মেয়েটা আর নেই ভাবতেই পারছি না, পুজোর জামাগুলো কী হবে?’

শোক: বন্ধুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সায়েশার বাবা। শিলিগুড়ির বাড়িতে বুধবার।

আগমনীর আগেই বিষাদের সুর শিলিগুড়ির পঞ্জাবিপাড়ায়। ছোট সায়েশার জন্য। সে পুজোয় পরার জন্য নিজে হাতে জামাকাপড় পছন্দ করেছিল। মায়ের মোবাইল থেকে একটা-একটা করে বেছে দিয়েছিল। অনলাইনে অর্ডারও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেগুলি আর তার পরা হল না। প্যাকেট যখন বাড়িতে পৌঁছল, সায়েশা চলে গিয়েছে অনেক দূরে। 
১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওই সাত বছরের ফুটফুটে মেয়েটি ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে প্রথমে শিলিগুড়ি তারপর কলকাতার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হয়। রবিবার সে মারা যায়। কলকাতায় তার শেষকৃত্যের পরে বুধবার শিলিগুড়ির বাড়িতে ফিরল তার বাবা শৌমিক বন্দ্যোপাধ্যায়, ঠাকুরমা রিঙ্কুদেবী এবং ঠাকুরদা স্বপনবাবু। ওর ঠাকুরমার মুখেই শোনা গেল একরত্তি মেয়ের কৃতির কথা। শহরের একটি নামী ইংরেজি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী বানানে তুখোড় ছিল। পুরস্কারও পেয়েছিল তার জন্য।

ঠাকুমা রিঙ্কুদেবীর কথায়, ''বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। ছবি আঁকতে ভালবাসত।'' কল্পনাপ্রবণ সায়েশা বাঁচতে চেয়েছিল। তার চারপাশের সকলকে ভরসা করতে চেয়েছিল। কিন্তু ক'দিনের জ্বরে যে একদিন সব শেষ হয়ে যাবে তা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেনি সে। নাতনির চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ করেছেন রিঙ্কুদেবী, বলেন, ''আমার নাতনির সামান্য একটা রোগ নিয়ে এতটা অবহেলা ওরা করতে পারল?'' পুজোয় কী কী করবে সেই সব পরিকল্পনাও করে রেখেছিল ছোট্ট সায়েশা। তার শোকে তার মা দেবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এখনও কলকাতার একটি নার্সিংহোমে মানসিক অবসাদের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। সায়েশার আবাসনেও বিষাদের সুর। পড়শিরা বলছেন, ছুটির দিনে মামার বাড়ি খেলতে যেত। আবাসনে কারও সঙ্গে দেখা হলেই হেসে গল্প করত। পড়শি রাখি অগ্রবাল বলেন, ''মেয়েটা আর নেই ভাবতেই পারছি না।''