এবার পর্যটকদের চোখ ডুয়ার্সের জঙ্গল অক্টোবরে হোমস্টে, রিসর্ট, বনবাংলো হাউসফুল

আলিপুরদুয়ার: কেরলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে দক্ষিণ ভারতের বদলে কলকাতার আম বাঙালির পুজোয় বেড়ানোর জন্য ডুয়ার্সের হোমস্টে, সরকারি বেসরকারি রিসর্টে বুকিংয়ের ঢল নেমেছে। বুকিংয়ের বহরে খুশি ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। আলিপুরদুয়ারের জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান, চিলাপাতা ও বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প লাগোয়া হোমস্টে ও রিসর্ট মালিকরা জানিয়েছেন, পুজোর ষষ্ঠী থেকে একাদশী প্রতিটি হোমস্টে ও রিসর্ট হাউসফুল হয়ে গিয়েছে। এদিকে পর্যটন দপ্তরের জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজ এবং হলং বনবাংলো গোটা অক্টোবর মাস পর্যন্ত ঠাসা বুকিং হয়ে আছে।

ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সভাপতি পার্থসারথি রায় বলেন, জেলার জঙ্গল লাগোয়া হোমস্টে ও বেসরকারি রিসর্ট পুজোর সময় এমনিতেই বুকিং থাকে। কিন্তু গতবছর আগস্ট মাসে ভারী বৃষ্টির কারণে রেল যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন থাকায় বুকিং আচমকাই পড়ে গিয়েছিল। তবে বিগতবছরগুলি থেকে এবার চাহিদা অনেকটা বেড়েছে। আমাদের ধারণা, কেরলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই কলকাতার বাঙালিরা এবছর পুজোয় ডুয়ার্সকে ভ্রমণ তালিকায় রেখেছেন।

রাজাভাতখাওয়ার পাশে কালচিনির গারোপাড়ার একটি হোমস্টের মালিক লালসিং ভূজেল বলেন, কেরলের প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে এবার ডুয়ার্সের প্রতি কলকাতার ভ্রমণপিপাসুরা মুখিয়ে আছেন। পুজোর দেড় মাস আগেই গোরোপাড়ার হোমস্টেগুলি হাউসফুল হয়ে গিয়েছে।

এদিকে গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজাভাতখাওয়ায় বন উন্নয়ন নিগম ও জয়ন্তীতে বনদপ্তরের বাংলো বন্ধ হয়ে আছে। তবে পর্যটন দপ্তরের জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজ ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে বনদপ্তরের হলং বনবাংলো গোটা অক্টোবর মাস পর্যন্ত ঠাসা বুকিং হয়ে গিয়েছে। জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজের ৩৪টি ঘরে দু'টি করে মোট ৬৮টি বেড আছে। অন্যদিকে হলং বনবাংলোতে পাঁচটি রুমে ১০টি বেড আছে। দু'টিতেই গোটা অক্টোবর মাস পর্যন্ত কোনও রুম ফাঁকা নেই।

জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজের ম্যানেজার নিরঞ্জন সাহা বলেন, অক্টোবর মাস পর্যন্ত দু'জায়গাতেই হাউসফুল রয়েছে। কেরলে দুর্যোগের কারণে দক্ষিণ ভারতের বদলে কলকাতার সাধারণ ভ্রমণপিপাসুরা পুজোয় ডুয়ার্সের প্রতি ঝুঁকেছেন। আমরা এতে সকলেই খুশি। 

আলিপুরদুয়ার জেলার জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প ও চিলাপাতা বনাঞ্চল লাগোয়া রাজাভাতখাওয়া, গারোপাড়া, জয়ন্তী, সান্তালাবাড়ি, চিলাপাতা, মেন্দাবাড়ি, টোটোপাড়া, বক্সা ফোর্ট, কোদালবস্তি ও শালকুমারে সব মিলিয়ে প্রায় ৫৫টি হোমস্টে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। শহরের কোলাহল থেকে জঙ্গল ঘেঁষা নিস্তব্ধ পরিবেশের মধ্যে পুজোর ক'দিন ছুটি কাটাতে হোস্টেগুলিতে পর্যটকরা এবার হামলে পড়ছেন। বনবস্তি এলাকায় বাড়ির মধ্যেই এই হোমস্টেগুলি হয়েছে। এগুলিতে একসঙ্গে পাঁচ-ছ'জন থাকা যায়। জঙ্গলের মধ্যে থাকলেও রাতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও চিন্তা নেই। কারণ পর্যটকরা হোমস্টেতে এলে তাঁদের সরকারি নথিপত্র স্থানীয় থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। হোমস্টেতে একরাত থাকার জন্য ন্যূনতম ১৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। খাওয়ার খরচ আলাদাভাবে বহন করতে হয়। হোমস্টেতে পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য সন্ধ্যায় স্থানীয় জনজাতিগুলি তাঁদের পোশাক পড়ে নাচ, গান করেন। পর্যটকদের কাছে এটা বাড়তি পাওনা।