এক নজরে কি এই ৩৭৭ ধারা ?

নয়াদিল্লি: সময়টা ১৮৬২ সাল৷ তৈরি হল ৩৭৭ ধারা৷ যে ধারা অনুযায়ী প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধাচারণ করে যদি কেউ যৌন সংসর্গে লিপ্ত হন, তাহলে তা অপরাধ৷ এক কথায় সমকামিতা আইনের চোখে অপরাধ৷ দেড়শো বছরেরও বেশি পুরোনো এই নিয়মের পরিবর্তন হয়ত অবশ্যম্ভাবী ছিল৷ তবে লড়াইয়ের পথটা মোটেও সহজ ছিল না৷

কি ছিল এই ৩৭৭ ধারায়? বলা হয়েছিল কেউ যদি প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে পুরুষ, নারী বা জন্তুদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তবে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। একইসঙ্গে তাঁকে দিতে হতে পারে মোটা অঙ্কের জরিমানা৷ এমনকী ধারায় বলা হয়েছে কোনও পুরুষ বা মহিলা একই লিঙ্গের কারও সঙ্গে যৌন সংসর্গ করলে, তাও অপরাধ বলে গণ্য করা হবে৷ সমলিঙ্গের মধ্যে যৌন সম্পর্কও এই ধারার চোখে অপরাধ৷
 
কিন্তু কেন তৈরি হয়েছিল এই ধারা? বিশেষজ্ঞদের মতে পশ্চিমী দেশগুলিতে সমকামিতার প্রভাব বেশি ছিল সেই সময়েও৷ তা রুখতেই তৈরি করা হয় ৩৭৭ ধারা৷ ১৮৬২ সালের এই ধারা অনুযায়ী সমকামীদের হেনস্থা ও অপদস্থ হতে হত বলে অভিযোগ ছিল৷

এখন যেহেতু এই ধারা আর কার্যকর রইল না, এবার সমকামিতা আর অপরাধ বলে গণ্য করা হবে না৷ সমকামিতা অপরাধ নয়, প্রথম বার আওয়াজ তুলেছিল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নাজ ফাউন্ডেশন৷ ২০০১ সালে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা দায়েরের মধ্যে দিয়ে শুরু সমানাধিকারের দাবি আদায়ের লড়াই৷ ২০০৯ সালে
ভারতীয় দণ্ডবিধির এই ৩৭৭ ধারার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম আপত্তি জানিয়েছিল স্বে‌চ্ছাসেবী সংস্থা নাজ ফাউন্ডেশন। ২০০৯ সালে দিল্লি হাইকোর্ট সেই মামলার রায় দেয়৷ সেই রায় আসে সমকামিতার স্বপক্ষে৷ দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, দুই প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্ক কখনই অপরাধ নয়। তাঁদের যৌন পছন্দের অধিকার সংবিধান স্বীকৃত৷ কারণ সংবিধান সমানাধিকারের কথা বলে৷ তবে এই জয়ের আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি৷

দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে৷ ২০১৩ সালে দিল্লি হাইকোর্টের রায় বাতিল ঘোষণা করে শীর্ষ আদালত৷ জানায়, ৩৭৭ ধারার সাংবিধানিক বৈধতা আছে। সমকামিতা যে অপরাধ নয়, তার স্বপক্ষে যুক্তি দেখাতে গেলে প্রয়োজন সংসদের সিলমোহর৷ সংসদ থেকে আইন পাশ করাতে হবে৷

ফের রিট পিটিশন দাখিল করা হয়৷ ২০১৩ সালের রায় বিবেচনা না করে ৩৭৭ ধারার সাংবিধানিক বৈধতা ফের বিচার করে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় শীর্ষ আদালত। অবশেষে মিলল ছাড়পত্র৷ ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ জানিয়ে দিল, সমকামিতা আর অপরাধ নয়।