শহরে শিশুদের মধ্যে বাড়ছে হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা


কলকাতায় প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদের মধ্যেও বাড়ছে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি।
সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, বিশ্বের ২৫ শতাংশ শিশু হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এ শহরেও বিপদ একই রকম। এক বেসরকারি হাসপাতালের সমীক্ষা জানাচ্ছে, শহরে প্রতি ১০০ জন সদ্যোজাতের মধ্যে ২ জন হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত। এ সব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা শুরু না হলে জটিলতা বাড়ে এমনকি প্রাণহানির ঝুঁকিও থেকে যায়।

তবে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শিশুর ওজন ও ঠোঁটের রং নিয়ে সতর্ক থাকলে এড়ানো যেতে পারে বিপদ। জন্মের প্রথম দু'মাসে শিশুর ওজন বৃদ্ধি নিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাবা-মায়েরা সতর্ক থাকেন না। অনেকের ধারণা থাকে, বছর খানেকের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ওজন বৃদ্ধি না হলে হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা থেকে যায়।

শিশুরোগ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এ দেশে সদ্যোজাতের স্বাভাবিক ওজন হল আ়ড়াই থেকে ৩ কেজি। জন্মের প্রথম দু'সপ্তাহ পর থেকেই ওজন বাড়তে শুরু করে। ৫ মাসে তা হয় জন্মের সময়ের ওজনের দ্বিগুণ।

শিশু-চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওজন পর্যাপ্ত না হওয়াই বিপদের লক্ষণ। সাধারণত স্তন্যপানেই শিশুর প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটে যায়। কিন্তু পর্যাপ্ত স্তন্যপানের পরেও যদি শিশুর বিকাশ ঠিক মতো না হয়, তা হলে সতর্ক হওয়া জরুরি। পাশাপাশি, স্তন্যপানের সময় শিশুর ঘাম হলে বা সে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও সতর্ক হওয়া দরকার। শিশু-চিকিৎসক শুভেন্দু মণ্ডল বলেন, ''নির্দিষ্ট সময় অন্তর শিশুর ওজন না বাড়লে সতর্ক হওয়া জরুরি। হৃদ্‌যন্ত্রে সমস্যা থাকলে ওজন বাড়ে না। তবে সময় মতো চিকিৎসা শুরু হলে বিপদ এড়ানো যায়। কম ওজন রোগের উপসর্গ হলেও হৃদ্‌রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে তা অন্তরায় নয়।''

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ওজনের পাশাপাশি শিশুর জিভ, ঠোঁট ও হাত-পায়ের তলার রঙের দিকে নজর দেওয়াও জরুরি। সাধারণত, ঠোঁট, জিভ ও হাত-পায়ের তলার রং হালকা গোলাপি হয়। শিশু সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলে তবেই গোলাপি রং থাকবে। কিন্তু কান্নার সময় দেহের ওই অংশগুলি নীল হয়ে গেলে বিপজ্জনক। শিশু-চিকিৎসক অচ্যুত সরকার বলেন, ''জন্মের পরেই কান্নার সময়ে শিশুর হাত-পায়ের তলা ও ঠোঁটের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। তা নীল হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ প্রয়োজন। কারণ, হৃদ্‌যন্ত্রের জটিল সমস্যা থাকলে রং পরিবর্তন হয়।''

তবে, সতর্ক থাকলে বড় বিপদ এড়ানো যাবে বলেই আশ্বাস দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের দাবি, দেরি হলেই বিপদ বাড়ে। অস্ত্রোপচারে জটিলতা তৈরি হয়। এমনকি অস্ত্রোপচারের পরেও সমস্যা থেকে যায়, মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে দ্রুত রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করলে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে শিশু পরবর্তী কালে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।