কাল দিল্লিতে ডিলারদের ‘জেল ভরো’ আন্দোলন, বন্ধ থাকবে রেশন দোকান


সবার জন্য রেশনের খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার ব্যবস্থা করা সহ একগুচ্ছ দাবিতে রেশন ডিলারদের সর্বভারতীয় সংগঠন কাল, মঙ্গলবার দিল্লিতে 'জেল ভরো' আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এই আন্দোলনের জেরে মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশে রেশন দোকানগুলি বন্ধ থাকবে বলে অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস ফেডারেশন জানিয়েছে। দিল্লি থেকে ডিলারদের ফিরে আসতে কয়েকদিন সময় লাগবে। ফলে আরও কয়েকদিন রেশন দোকান বন্ধ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আজ, সোমবারই রেশন ডিলাররা দিল্লিতে পৌঁছে যাবেন। তবে এর জন্য আলাদা করে সমস্যা হচ্ছে না। কারণ সোমবার রেশন দোকানে সাপ্তাহিক ছুটি থাকে।

টানা কয়েকদিন বন্ধ থাকার জন্য রেশন গ্রাহকদের এতে সমস্যা হবে না বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। পরে যে কোনও সময় বরাদ্দ খাদ্যসামগ্রী তুলে নেওয়া যাবে। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে যে সপ্তাহ শুরু হচ্ছে, তা স্বাভাবিক রেশন সপ্তাহ নয়, এটা উল্লেখ করে খাদ্য দপ্তরের নির্দেশিকা আছে। অর্থাৎ এই সপ্তাহে রেশনের সামগ্রী গ্রাহকদের নাও সরবরাহ করা যায়। প্রতি মাসে চার সপ্তাহ রেশন গ্রাহকদের জন্য খাদ্য বরাদ্দ থাকে। কোনও মাসে পঞ্চম সপ্তাহ পড়লে সেটিকে স্বাভাবিক রেশন সরবরাহের সময়ের বাইরে রাখা হয়। ওই সময়ে অবশ্য রেশন দোকান বন্ধ রাখার কথা সরকারি নির্দেশিকায় নেই। তাতে বলা হয়েছে, আগের সপ্তাহগুলির বরাদ্দ খাদ্য তোলেননি, এমন গ্রাহকরা ওই সময় তা তুলে নিতে পারেন। ডিলার সংগঠনের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য রাজ্যগুলিতে দোকান বন্ধ থাকা জনিত সমস্যা আরও কম। কারণ সব রাজ্যে মাসে কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনে সারা মাসের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়।

রাজধানীর রাস্তায় নেমে রেশন ডিলারদের এই জেল ভরো আন্দোলনে শামিল হচ্ছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীর নিজের ভাই। অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস ফেডারেশনের সহ-সভাপতির পদে আছেন প্রহ্লাদ ভাই মোদি। তিনি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছোট ভাই। গুজরাতের রেশন ডিলারদের সংগঠনের পদে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন তিনি। রেশন ব্যবস্থা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে গুজরাতে ডিলারদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর ভাই। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভরবাবু জানিয়েছেন, গুজরাতে তাঁদের আন্দোলনকে অনেক বড় মাত্রায় নিয়ে যেতে পেরেছেন প্রহ্লাদ ভাই। প্রহ্লাদ মোদির বক্তব্য, তাঁর এই আন্দোলন দাদার বিরুদ্ধে নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে।

দেশে প্রায় পাঁচ লক্ষ রেশন দোকান রয়েছে। সব রেশন ডিলার, কর্মী এমনকী পরিবারের সদস্যদের দিল্লিতে নিয়ে আন্দোলনে শামিল করার উদ্যোগ নিয়েছে ফেডারেশন। প্রায় আট লক্ষ মানুষের জমায়েত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। রামলীলা ময়দান থেকে মিছিল সংসদ ভবনের দিকে এগবে। আইন অমান্য করে গ্রেপ্তার হওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এর আগে দিল্লিতে মিছিল করলেও গ্রেপ্তার হওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। রেশন ডিলারদের সব দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য। সবার জন্য রেশনের খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ, কেরোসিনের বরাদ্দ বৃদ্ধি, ডিলারদের কমিশন বাড়িয়ে মাসে ৩০ হাজার টাকা আয়ের ব্যবস্থা করা, রেশনের সরকারি ভর্তুকির অর্থ গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করার দাবিগুলি একাধিকবার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তোলা হলেও কোনও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ। দাবি না মানলে লোকসভা ভোটের আগে দীর্ঘস্থায়ী বড় আন্দোলনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।