পুজো কমিটিকে টাকা দিচ্ছেন, আমাদেরও বাঁচান মুখ্যমন্ত্রীঃ আর্জি রোগীদের


কলকাতা : কেউ বলছেন, ভাত-ডাল নয়, ডায়ালিসিস চাই। ডায়ালিসিস ছাড়া আমরা বাঁচতে পারব না। আবার কারও প্রশ্ন, পুজো কমিটিগুলোকে টাকা দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমাদের বাঁচার জন্য কে টাকা দেবেন ? ফ্রিতে ডায়ালিসিস করাতে না পেরে দিনভর চলল ভোগান্তি। প্রায় ১২ ঘণ্টা ভোগান্তির শেষে সমাধান মিলেছে। হয়েছে ফ্রি ডায়ালিসিস। পরের বার এই পরিষেবা পাওয়া যাবে কি না, তার কোনও নিশ্চয়তা খুঁজে পাচ্ছেন না পরিজনরা। আর দিনভর ভোগান্তির মধ্যে রোগী এবং পরিজনদের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রশ্নের পাশাপাশি আবেদন, "একটু দেখুন আমাদের"। গতকাল ঘটনাটি বেলেঘাটা ID হাসপাতালের।

এই হাসপাতালে PPP মডেলে চালু আছে ডায়ালিসিস পরিষেবা। ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এই পরিষেবার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ন্যায্যমূল্যের এই ডায়ালিসিস সেন্টারে বহু রোগীকে ফ্রিতেও পরিষেবা দেওয়া হয়। কিন্তু গতকাল সকাল থেকে হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আর ফ্রিতে এই পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়। রোগী এবং তাঁদের পরিজনরা তা জানার পরই ক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। অভিযোগ, PPP মডেলের চুক্তিবদ্ধ এই সেন্টারের কর্তৃপক্ষ তথা সংশ্লিষ্ট সংস্থা ফ্রি ডায়ালিসিসের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এক কোটি টাকা পাবে। যা এখনও দিয়ে উঠতে পারেনি রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর। তাই টাকা না পাওয়া পর্যন্ত ফ্রিতে পরিষেবা চালু করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল। শুধু তাই নয়, ফ্রিতে পরিষেবা নিতে আসা রোগী এবং তাঁদের পরিজনদের কাছে ডায়ালিসিসের জন্য টাকা চাওয়া হয় বলেও অভিযোগ। ঘটনার জেরে ডায়ালিসিস করাতে আসা রোগী এবং তাঁদের পরিজনদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। ডায়ালিসিস করাতে না পারলে রোগীর সমস্যা বেড়ে যাবে। এই আশঙ্কায় ফ্রিতে ডায়ালিসিস না করিয়ে রোগীকে নিয়ে পরিজনরা বাড়ি ফিরবেন না বলে ক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। এই অভিযোগের বিষয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চায়নি এই সেন্টারের কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

ডায়ালিসিস করাতে আসা এক রোগীর পরিজন তরুণ মণ্ডল জানিয়েছেন, সমাধানের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে গিয়েও আবেদন জানানো হয়েছে। গত দুই বছর ধরে সপ্তাহে দু'বার করে ডায়ালিসিস করাতে আসেন সোদপুরের বাসিন্দা টুসি দত্ত বণিক। গতকাল তাঁর কাছে ৭৯০ টাকা চাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এই রোগীর কথায়, "কোথা থেকে টাকা পাব ? স্বামী দিন আনে দিন খায়।" রোগী এবং তাঁদের পরিজনদের উৎকণ্ঠার মাঝে আবার হাসপাতালের পুলিশ টাকা দিয়ে ডায়ালিসিস করানোর পরামর্শ দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠছে। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে ধাপার বাসিন্দা কার্তিক মালিক বলেন, "আমরা প্রত্যেকে হাতজোড় করে দিদিকে বলছি, দিদি আপনি আমাদের একটু দেখুন। আমরা তো ভাত ডাল চাইছি না। আমরা বাচঁতে চাই। আর ডায়ালিসিস ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না।"

ধাপার বাসিন্দা কার্তিক মালিক এই হাসপাতালে এসেছিলেন নিজের ডায়ালিসিস করানোর জন্য। তিন বছর ধরে তাঁর ডায়ালিসিস চলছে। তিনি জানান, প্রথম এক বছর ফ্রি ছিল না ডায়ালিসিস। তখন জমি বিক্রি করে তাঁকে চিকিৎসার খরচ বহন করতে হয়েছিল। তবে এখন টাকা দিয়ে ডায়ালিসিস করার সামর্থ্য তাঁর নেই। আগে তিনি উপার্জন করতেন। দু'বছর ধরে ডায়ালিসিস করাচ্ছেন মানিকতলার বাসিন্দা শিখা সাহা। ডায়ালিসিসের জন্য গতকাল সকাল থেকে তিনি অপেক্ষা করছিলেন। তাঁর মতে, অনেক রোগী ডায়ালিসিস করাতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, "আমাদের দিকে তাকান। আর কিছু চাই না। বাঁচার জন্য তাকান মুখ্যমন্ত্রী।"

বেলেঘাটা হাসপাতালে গতকাল ছিলেন শিখা সাহা। তাঁর প্রশ্ন, "পুজো কমিটিগুলিকে মুখ্যমন্ত্রী ৫০ হাজার, ১০ হাজার করে দিচ্ছেন। এগুলো যদি দিতে পারেন তা হলে আমাদের মতো মানুষদের বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন না ? আমরা তো আর দু-চার বছর বাঁচব।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "পুজো কমিটিগুলি চাঁদা নেয়। বাড়ি, দোকান থেকে ওরা মোটা টাকা পায়। বিজ্ঞাপন থেকে টাকা পায়। উনি তাও আবার টাকা দিলেন। আমাদের কে টাকা দেবেন ?" 

মানিকতলার বাসিন্দা লক্ষ্মী পাল। তিনি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এর আগের বার তাঁরা গিয়েছিলেন।‌ "দিদি" আশ্বাস দিয়েছেন। তারপর ডায়ালিসিস শুরু হয়েছিল। যাতে ডায়ালিসিস করানো হয়, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন রেখেছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। পথ অবরোধ করেছেন। কিন্তু ডায়ালিসিস করাতে এসে বারবার সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এর জন্য রোগীদের ভোগান্তি হচ্ছে। তিনি বলেন, "দিদির কাছে আমরা অনুরোধ করছি, তিনি যেন একটু দেখেন। ডায়ালিসিস যেন অন্তত চালু হয়। রোগীরা যেন সুস্থ ভাবে একটু বাঁচেন।"

এদিকে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে PPP মডেলের চুক্তিবদ্ধ ডায়ালিসিস সেন্টারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এদিন বৈঠক করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছ'টার টার পরে জানানো হয়, ফ্রিতে পরিষেবা দেওয়া হবে। এই বিষয়ে হাসপাতালের MSVP তথা উপাধ্যক্ষ তুলতুল চট্টোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চাওয়া হয় তাঁর বক্তব্য। তিনি জানিয়েছেন, এই বিষয়ে যা বলার তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবে।