সেনার অস্ত্র যাচ্ছে জঙ্গিদের হাতে, শিকড় বাংলাতেও


সেনাবাহিনীর অস্ত্র ভাণ্ডার থেকে মাওবাদীদের হাতে অস্ত্র পৌঁছনোর শিকড় লুকিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। মুঙ্গেরে অস্ত্র উদ্ধারের পরে তদন্তে নেমে বিহার পুলিশ বাগডোগরার '১৫ ফিল্ড অ্যামুনেশন ডিপো' থেকে এক জন প্রাক্তন সেনাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে গত শুক্রবার। তিনি ব্যাঙডুবির সেনা ছাউনির ডিফেন্স সিকিউরিটি কোরের সেনা ডিপোতে ঠিকা কর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। নাম মহম্মদ নিয়াজুর রহমান। শিলিগুড়ি আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরানো একটি মামলায় খুনের চেষ্টা ও অস্ত্র আইনে তাকে ট্রানজিট রিমান্ডে বিহারের মুঙ্গের নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যেই বিহার পুলিশ অস্ত্র-পাচার চক্রের তদন্তভার এনআইএয়ের হাতে দেওয়ার জন্য চিঠি লিখেছে। সেই তদন্তে সেনা ডিপোর অস্ত্র কী ভাবে জঙ্গিদের হাতে গেল তা জানা যাবে বলে আশা করছে তারা। এক সেনা আধিকারিক বলেছেন, ''পুরো ঘটনার ব্যাপারে সেনার তরফেও তদন্ত করা হচ্ছে।''

মুঙ্গেরের পুলিশ সুপার বাবুরাম বলেন, "আগ্নেয়াস্ত্র বিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে। বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত হয়েছে। উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগুলির মধ্যে সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে। অস্ত্র পাচার চক্রের তদন্তে নেমে আমরা নিয়াজুরের কথা জানতে পারি। তাঁকে জেরা করা হচ্ছে।"

গত ৩০ অগস্ট জামালপুর থানার পুলিশ ইমরান আলম নামে এক জনকে ৩টি একে-৪৭ রাইফেল এবং ৭টি একে-৪৭ রাইফেলের যন্ত্রাংশ সমেত  গ্রেফতার করে। অস্ত্রের ধরন দেখেই পুলিশের ধারণা হয়, এগুলি   সেনাবাহিনীর অস্ত্র। এর পরে সেনা ডিপো থেকে একে-৪৭ রাইফেল পাচারের চক্রের খোঁজ পায় পুলিশ। মধ্যপ্রদেশ পুলিশ জবলপুর থেকে গ্রেফতার করে প্রাক্তন সেনাকর্তা পুরুষোত্তম রজককে। তার পরেই পুলিশ নিশ্চিত হয়, উদ্ধার হওয়া ওই সব অস্ত্র  সেনাবাহিনীর অস্ত্রভাণ্ডার থেকেই এসেছে।

পুলিশ পরে পুরুষোত্তম রজকের ছেলে শৈলেন্দ্র রজককে ও সুরেশ ঠাকুর নামে অস্ত্রভাণ্ডারের এক বর্তমান কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের কাছ থেকে নগদ প্রায় ১২ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া পাওয়া গিয়েছে ৮০ হাজার টাকার বাতিল নোটও। অস্ত্রভাণ্ডারের প্রাক্তন কর্তা পুরুষোত্তম ২০১২ সালে অবসর নেন। সেনাবাহিনীর অস্ত্রভাণ্ডারের বর্তমান কর্তাদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। ধৃতদের জেরা করে পাওয়া সূত্র ধরে পুলিশ আরও ৩টি একে-৪৭ সিরিজের রাইফেল উদ্ধার করেছে মুঙ্গেরেরই মফসসল থানার ওয়ার্ধা গ্রাম থেকে। একে-৪৭ রাইফেল ছাড়াও একটি সিঙ্গল ব্যারেল এবং একটি ডবল ব্যারেল রাইফেল উদ্ধার হয়। গ্রেফতার করা হয় মহম্মদ শামসেরকে। এ পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে মোট ছ'টি একে-৪৭ রাইফেল এবং ৭টি একে-৪৭ রাইফেলের যন্ত্রাংশ।

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন শামসের এবং ইমরানের সঙ্গে পুরুষোত্তমের পরিচয় করিয়েছিল নিয়াজুর। গোটা চক্রটাই নিয়াজুর নিয়ন্ত্রণ করত বলে মনে করছে পুলিশ। ২০০৯ সালে মুঙ্গেরে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে নিয়াজুরের বিরুদ্ধে। নিয়াজুরকে জেরা করে অনেক সূত্র পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।