পিপিএফ, এনএসসি ও ডাকঘরের স্বল্প সঞ্চয়ে বাড়ল সুদ

ভোটের আগে ড্যামেজ কন্ট্রোল? বিগত সাড়ে চার বছর ধরে লাগাতার ব্যাঙ্ক থেকে ডাকঘর জমা টাকার উপর সুদের হার কমেছে। কমেছে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের সুদ। মধ্যবিত্ত ও অবসরপ্রাপ্তদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ জমা হয়েছে। অবশেষে আর একটি লোকসভা ভোট আসার প্রাক্কালে ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলির সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল মোদি সরকার। পাবলিক প্রভিডেন্ড ফান্ড, কিষাণ বিকাশ পত্র, ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা, সিনিয়র সিটিজেন স্কিম ও ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্পের প্রতিটিতেই সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে আগামী ত্রৈমাসিকে। পাবলিক প্রভিডেন্ড ফান্ডে সুদের হার বেড়ে হল ৮ শতাংশ। ছিল ৭.৬ শতাংশ। সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা প্রকল্পে সুদের হার হবে ৮.৫ শতাংশ। ছিল ৮.১ শতাংশ। কিষাণ বিকাশ পত্র প্রকল্পে এখন ১১৮ মাসে জমা টাকা দ্বিগুণ হয়। আজ সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় এবার ১১২ মাসে টাকা দ্বিগুণ হবে। একসময় এই কিষাণ বিকাশ পত্র সাড়ে পাঁচ বছরে টাকা দ্বিগুণ করার প্রকল্প ছিল। ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট প্রকল্পে এবার ৮ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যাবে। ডাকঘরের মাসিক আয় প্রকল্প খাতে নতুন সুদের হার ধার্য হয়েছে ৭.৭ শতাংশ. সিনিয়র সিটিজেন প্রকল্পে এখন পাঁচ বছরের জন্য টাকা জমা রাখা হলে সুদ পাওয়া যাবে ৮.৭ শতাংশ। পাঁচ বছরের জন্য ডাকঘরের রেকারিং ডিপোজিট প্রকল্পে এখন সুদের হার পাওয়া যায় ৬.৯ শতাংশ। সেটি আজ বাড়িয়ে করা হল ৭.৩ শতাংশ। ডাকঘরে ৫ বছরের জন্য ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রেও সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এখন পাওয়া যাবে ৭.৮ শতাংশ। এছাড়া এই জমা টাকার প্রকল্পে ৮০ সি ধারায় আয়কর ছাড় পাওয়া যাবে।

নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং অবসরপ্রাপ্তদের কাছে আগে ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের আওতাভুক্ত বিভিন্ন আয় প্রকল্পগুলি ছিল সবথেকে বেশি আকর্ষণীয়। কিষাণ বিকাশ পত্র, ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট এবং ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্প ছিল প্রবল জনপ্রিয়। কিন্তু বিগত বছরগুলিতে বস্তুত প্রায় ১০ বছর ধরেই এই ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলির উপরই সবথেকে বেশি কোপ পড়েছে। সুদের হার কমাতে কমাতে এমন পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে যে আর এইসব প্রকল্প নিয়ে মানুষ তেমন আগ্রহী নয়। ইন্দিরা বিকাশ পত্র আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিষাণ বিকাশ পত্র আর ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট কোনওরকমে টিকে আছে। কিন্তু সেগুলি থেকে বড়সড় সুদ পাওয়ার সুযোগ আর নেই। পক্ষান্তরে ব্যাঙ্কের জমা টাকার উপর সুদের হারও ক্রমান্বয়ে কমেছে। সুতরাং ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের নিরাপদ ও নিয়মিত আয় প্রকল্পগুলির পথ একপ্রকার বন্ধই হয়েছে। যা নিয়ে সাধারণের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভ ছিল। কারণ সাম্প্রতিককালে পেনশন হোক, পি এফ হোক সবই শেয়ার বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করে একটি অনিশ্চয়তার লগ্নির মধ্যে ঠেলে দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। এই অবস্থায় কিছুটা হলেও ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করছে কেন্দ্র। সেই লক্ষ্যেই বহুদিন পর আবার ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। তবে আপাতত এই বৃদ্ধি আগামী ত্রৈমাসিকের জন্য। অর্থাৎ ১ অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই হার প্রযোজ্য। তারপর ফের সুদের হার বাড়বে কিংবা কমবে সেটা অনিশ্চিত। ডাকঘরে তিন বছরের জন্য টাকা জমা রাখা হলে ১ অক্টোবর থেকে পাওয়া যাবে ৭.২ শতাংশ সুদ। ২ বছরের জন্য টাকা জমা রাখা হলে পাওয়া যাবে ৭ শতাংশ সুদ। এক বছরের জন্য ধার্য সুদের হার ৬.৯ শতাংশ।