অত্যাচারী নাৎসিদের রূপে ভুলিয়ে টেনে এনে খুন করতেন তিনি, সদ্যপ্রয়াত মোহময়ীকে চেনেন?

শেষ বয়সে ফ্রেডি।

প্রয়াত হলেন নাৎসি দমনকারী ডাচ নারী প্রতিরোধ বাহিনীর শেষ জীবিত সদস্য ফ্রেডি ওভারস্টিজেন। ৯৩তম জন্মদিনের ঠিক আগেই তাঁর দেহাবসান হল। 

মাত্র ১৪ বছর বয়সে নারী প্রতিরোধ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন ফ্রেডি। ঘন কালো চুলের শান্তশিষ্ট কিশোরীকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না, উত্তর হল্যান্ডের রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর জিম্মায় থাকত মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র। কখনও আবার নারী-লোলুপ হিটলার বাহিনীর সদস্যদের নানান ছলনায় ভুলিয়ে নির্জনে নিয়ে গিয়ে ঠান্ডা মাথায় খুন করতেও হাত কাঁপত না দুঃসাহসী মেয়ের।

ডাচ প্রতিরোধ বাহিনী সম্পর্কে বেশির ভাগেরই ধারণা ছিল যে, শুধুমাত্র নাৎসি বিরোধী পুস্তিকা বিলি বা লিফলেট ছড়ানোই এই মেয়েদের কাজ। কিন্তু ফ্রেডি ও তাঁর চেয়ে দুই বছরের বড় দিদি ট্রুস ছিলেন ব্যতিক্রমী। আমস্টারডাম শহর ও সংলগ্ন অঞ্চলে জার্মান দখলদার ও বিশ্বাসঘাতক ডাচদের নিকেশ করতে তাঁরা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। 

হ্যানি শ্যাফ্ট নামে এক আইনের ছাত্রীর সঙ্গে সেই সময় রেল লাইন ও একাধিক সেতু উড়িয়েছেন দুই বোন। এমনকী, জার্মান কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে ইহুদি শিশুদের উদ্ধার করে সীমান্ত পার করতে ছদ্মবেশ নিতেও পিছ-পা হননি। 

নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির কাজ ছিল বিভিন্ন পানশালায় নাৎসি সেনা অভিসারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আলাপ জমিয়ে, তাদের ভুলিয়ে কোনও জনবিরল স্থানে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা। একবার ইন্টারভিউতে সে প্রসঙ্গে ওভারস্টিজেন বলেছিলেন, 'আমাদের ওটা করতে হতো। ভালো মানুষের সঙ্গে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করত, তাদের চরম দণ্ড দেওয়াই ছিল বিধান।' 

নেদারল্যান্ডসের হারলেম শহরে বাস করতেন ফ্রেডি ওভারস্টিজেন। জীবনের উপান্তে এসে অবশ্য নানান রোগভোগের জেরে ঠাঁই হয় শহর থেকে ৫ কিমি দূরের এক নার্সিংহোমে। সম্প্রতি পর পর বেশ কয়েকটি হার্ট অ্যাটাকে কাবু হয়ে পড়েছিলেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর পৃথিবী ছেড়ে চিরতরে বিদায় নিলেন এই সাহসিনী।