বর্ধমান স্টেশনে ধর্ষিত হওয়া বৃদ্ধার সঙ্গে সেলফি ও তাণ্ডব চালালেন একদল স্বঘোষিত ‘সমাজসেবী’ আইসিইউতে।


এ কেমন মানবিকতা! বর্ধমান স্টেশনে ধর্ষিত হওয়া বৃদ্ধার খোঁজ নিতে গিয়ে হাসপাতালের আইসিইউ-তে ঢুকে কার্যত তাণ্ডব চালালেন একদল স্বঘোষিত 'সমাজসেবী'। নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে হাতাহাতি, নার্সকে ধাক্কা, টেকনিশিয়ানদের হুমকি, ডাক্তারকে গালাগাল, সবই হল। এমনকী 'সমাজসেবী'রা ধর্ষিতার সঙ্গে সেলফিও তুললেন দেদার। ডাক্তারের নিষেধ অগ্রাহ্য করে জবরদস্তি কথা বলার চেষ্টাও করেন নির্যাতিতার সঙ্গে। স্তম্ভিত আইসিইউ-তে থাকা বাকি রোগীদের পরিবার। ঘটনার কথা জানিয়ে হাসপাতালের তরফে বর্ধমানের পুলিশ সুপারের কাছে এফআইআর করা হয়েছে।

সংক্রমণের ভয়ে আইসিইউ-তে বহিরাগতদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। ডাক্তার-নার্সরাও বাইরের জামাকাপড় ছেড়ে আইসিইউ-তে ঢোকেন। সেই কথা গোটা গোটা অক্ষরে লেখাও রয়েছে আইসিইউ-র বাইরে। তবু ধর্ষিতার কাছে পৌঁছনোর জন্য পেশীশক্তির প্রদর্শন চলল। বাইরের জামা-জুতো-পোশাক পড়ে হইহই করে আইসিইউ-তে ঢুকল ৮ জনের একটি দল। সুপার ডা. উৎপল দাঁ নিজে বর্ধমানের পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি করেছেন। যদিও একজনও গ্রেফতার হয়নি। উলটে অভিযুক্তরা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য সাফাই গাইছেন। বলছেন, ধর্ষিতা মহিলার চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছে কী না জানতেই তারা হাসপাতালে যান।

১৪ সেপ্টেম্বর বর্ধমান স্টেশনে ৭০ বছরের এক ভিখারিনীকে খাবারের টোপ দিয়ে রাতের অন্ধকারে ধর্ষণ করা হয়। বোতল ভেঙে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যৌনাঙ্গে। ঘটনার পর জিআরপি নির্যাতিতাকে সংকটজনক অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসে। সুপার ও সহকারী সুপাররা যুদ্ধাকালীন তৎপরতায় ভর্তির ব্যবস্থা করেন। আইসিইউ-তে রেখে শুরু হয় বৃদ্ধার চিকিৎসা। জানা গিয়েছে, রবিবার বিকেলে 'সেফ ডেমোক্র্যাসি' নামে একটি সংগঠনের তরফে কিছু মানুষ হাসপাতালে আসেন। নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে চান। কিন্তু যেহেতু নির্যাতিতাকে আইসিইউ-তে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে তাই সেই অনুরোধ রাখা সম্ভব হয়নি। উৎপলবাবু বলেন, "পুলিশ মারফত আমি স্পষ্ট জানিয়ে দেই, আইসিইউ-তে কোনওভাবেই বহিরাগতকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। আর বৃদ্ধার যা মানসিক অবস্থা তাতে ওর সঙ্গে কথা বলাটাও বিপজ্জনক। পুলিশকেও কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। সেখানে ওই লোকগুলি বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ জোর করে

নিরাপত্তারক্ষী-নার্স-ডাক্তারদের অগ্রাহ্য করে আইসিইউ-তে ঢুকে গেলেন। নষ্ট করলেন অন্য রোগীদের 'প্রাইভেসি'। একবারও ভাবলেন না ওদের এই হঠকারিতার মাসুল গুনতে হবে বারো মুমূর্ষুকে।" সুপারের নির্দেশেই আইসিইউ-তে থাকা নিরাপত্তারক্ষী-নার্স-টেকনিশিয়ান-ডাক্তাররা এদিন এফআইআরে স্বাক্ষর করেন। পুলিশ সূত্রের খবর, এফআইআরে দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়, স্বপন খাঁড়া, চঞ্চল চক্রবর্তী, অমিতাভ গড়াই, মিতা চক্রবর্তী, রাকা মুখোপাধ্যায়, গৌরব সমাদ্দার ও অভিষেক ভট্টাচার্যর নাম রয়েছে।