বাড়ির সামনে থেকেই নিখোঁজ শিশু, যৌন নির্যাতনের পর রাস্তায় ফেলে গেলেন পিতৃতুল্য ব্যক্তি


বাড়ির সামনের দোকান থেকে মোবাইলের রিচার্জ কার্ড কিনতে বেরিয়েছিল সাত বছরের মেয়েটি। পাড়ার তারই বয়সি একটি মেয়ের বন্ধুর বাবার সঙ্গে দেখা। লোকটি আগে থেকেই চেনা। পিতৃতুল্য সেই লোকই মেয়েটিকে ভুলিয়েভালিয়ে নিয়ে গেল। সারাদিন শহরের নানা প্রান্তে ঘুরিয়ে, যৌন নির্যাতন চালিয়ে ফেলে দিয়ে গেল রাস্তায়। অর্ধচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। সপ্তাহের শুরুতে খাস কলকাতার বুকে এমনটাই ঘটেছে বলে অভিযোগ।

ব্রেবোর্ন রোডের ফুটপাত থেকে নাবালিকাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল কয়েক বছর আগে। সম্প্রতি নারকেলডাঙা এবং এন্টালিতে দু'টি বালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। সোমবারের ঘটনা ফের দেখিয়ে দিল, এ শহরে শৈশব নিরাপদ নয় মোটেই। শিশুটির বয়ানের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অপহরণ ও শিশুদের যৌন নির্যাতন বিরোধী আইনের (পকসো) ৪ নম্বর ধারায় মামলা করেছে। শিশু ধর্ষণের অভিযোগেই সাধারণত এই ধারা প্রযুক্ত হয়। তবে পুলিশ মৌখিক ভাবে 'ধর্ষণ' শব্দটি উচ্চারণ করেনি। অভিযুক্ত এলাকাছাড়া। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাকে ধরা যায়নি।

পুলি‌শ ও অভিভাবকদের দাবি, শিশুটি বলেছে, বন্ধ দোকানের সামনে তার সঙ্গে ওই পরিচিত ব্যক্তির দেখা হয়। শিশুটি জানিয়েছে, বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে লোকটি তাকে প্রথমে কিছু খাওয়ায়। তার পর দিনভর বাসে-ট্রেনে নানা জায়গায় নিয়ে যায়। বাবুঘাট আর শিয়ালদহ এলাকা চিনতে পেরেছিল সে। পুলিশের মতে, মেয়েটি আর যা যা বলেছে, তাতে যৌন নিগ্রহই উঠে আসছে। চিৎকার করলে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকিও দিয়েছিল লোকটি। সে-ই পরে তাকে বৌবাজার এলাকায় ছেড়ে পালায়। অভিযুক্তের বা়ড়ি তালতলা এলাকায় বলে শিশুটি জানিয়েছে। ওই দিন রাতেই পুলিশ তার ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে এলিয়ট রোডের একটি হোমে পাঠিয়ে দেয়। অভিযুক্তের খোঁজে রিপন স্ট্রিটের চারপাশের রাস্তার সিসিটিভি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারটি রিপন স্ট্রিটেই একটি বাড়ির একতলায় ঘরভাড়়া নিয়ে থাকে। বৃহস্পতিবার শিশুর মা জানান, তাঁর তিন মেয়ে। নিগৃহীত মেয়েটি মেজো। গত সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ তাকে মোড়ের দোকান থেকে রিচার্জ কার্ড কিনতে পাঠিয়েছিলেন। বেশ কিছুক্ষণ পরেও সে ফিরল না দেখে বড় বোন বেরিয়ে দেখে, দোকানটি বন্ধ। দুপুরে পার্ক স্ট্রিট থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে পরিবার। রাতে ফোন আসে বৌবাজার থানা থেকে। বাবা-মা গিয়ে তাকে শনাক্ত করেন। লালবাজার সূত্রে খবর, সে দিন সন্ধ্যায় কলেজ স্ট্রিট-বৌবাজার মোড়ে একটি শিশুকন্যা ঘুরে বে়ড়াচ্ছে বলে খবর পেয়ে বৌবাজার থানার পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।