কী ভাবে শূন্য হল ১৬২! বিসিএস দুর্নীতিতে পিএসসি-র কাছে খাতা চাইল হাইকোর্ট


ডবলুবিসিএস-এর প্রবেশিকা পরীক্ষায় বিশাল ধরনের নম্বর গোলমালের খবর সকলের সামনে তুলে ধরেছিল ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি। এবার সেই কেলেঙ্কারিতে খাতা তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট। অদৃশ্য জাদুবলে বাংলা ও ইংরাজির আসল প্রাপ্য নম্বর সরিয়ে পরে বিশাল অঙ্কের নম্বর বসিয়ে দেওয়া হয়। এই নিয়ে খোদ রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অগুণিত কর্মীদের মধ্য়ে অন্তোষও তৈরি হয়েছিল। এবার সেই ঘটনাতেই পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কাছে খাতা তলব করা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। 

এই দুর্নীতি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। জানা যায় যে পরীক্ষার্থীর খাতা ঘিরে এই দুর্নীতি হয়েছে তাঁর নাম সুশান্ত বর্মণ। বাড়ি ময়নাগুড়ি এলাকায়। ২০১৭ সালের বিসিএস-এর প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসা সুশান্ত বর্মণের বাংলায় প্রাপ্ত নম্বর ছিল ১৮। কিন্তু, পরে এক নতুন ট্যাবুলেশন শিট জোড়া হয়। তাতে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর দেওয়া হয় ১৬৮। এমনকী, ইংরাজীতে সুশান্তর প্রাপ্ত নম্বর ছিল শূন্য। একই পদ্ধতিতে পরে নম্বর বাড়িয়ে করা হয় ১৬২।

এক পরীক্ষার্থীর খাতায় অনৈতিকভাবে নম্বর বাড়ানো নিয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অফিসে বিক্ষোভও তৈরি হয় কর্মীদের মধ্যে। গোটা ঘটনার জন্য পিএসসি-র চেয়ারম্য়ানকে দায়ী করে কমিশনের দফতরে পোস্টারও পড়ে। চাপে পড়ে কমিশনের চেয়ারম্যান একটি তদন্ত কমিটি গড়েছিলেন বটে, কিন্তু সেই কমিটি-র সদস্যদের নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কারণ এই তদন্ত কমিটির মাথা ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যানের পূর্বসূরী। বিসিএস দুর্নীতির ঘটনা যখন সামনে আসে তখন এই পূর্বসূরিই চেয়ারম্যান ছিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে এই অনৈতিকতায় মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। যাঁর বিরুদ্ধে খোদ দুর্নীতির অভিযোগ তিনি কী ভাবে তদন্ত কমিটির মাথা হতে পারেন তা নিয়ে প্রশ্ন ছিলই।

কলকাতা হাইকোর্টও এই তদন্ত কমিটির রিপোর্টে সন্তুষ্ট নয়। সেই কারণে ১১ সেপ্টেম্বর আদালতের সামনে খাতা হাজির করতে পিএসসি-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পিএসসি-র তরফে দাবি করা হচ্ছে সুশান্তর খাতা রিভিউ করে নম্বর বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় ইংরাজিতে একটিও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি সুশান্ত। এমনকী বাংলাতেও তিনি একটি মাত্র প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। অথচ, ট্যাবুলেশন শিটে পরিবর্তিত নম্বরের সঙ্গে সঙ্গে খাতাও বদলে দেওয়া হয়েছে। কী ভাবে এটা সম্ভব হল? তার কোনও প্রশ্নের উত্তর কিন্তু পাননি পিএসসি-র কর্মীরা। যারা এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। পিএসসি-র সমস্ত কর্মীবৃন্দ সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, হুমকি-হুঁশিয়ারি আর অন্যত্র বদলি করে এই আন্দোলনের মাজা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

সবচেয়ে আরও অবাক করাকাণ্ড সংবিধান মানলে পিএসসি-তে কর্মরতদের অন্যত্র বদলি করা যায় না। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে করা হয়েছে। এটা ডবলুবিসিএস দুর্নীতিকে ঢাকা দিতেই বলে অভিযোগ করেছেন পিএসসি-র একশ্রেণির কর্মীরা। কিন্তু এভাবে জোর করে নম্বর বদলে, খাতা বদলে একজনকে বিসিএস অফিসার বানানোর প্রয়োজন পড়ছে কেন? পিএসসি-র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কিন্তু নিরুত্তর।