গলায় আটকে গিয়েছিল খোলা সেপটিপিন! তারপর...

সিউড়ি: গলায় আটকে গিয়েছিল খোলা সেপটিপিন! খাদ্যনালী ও শ্বাসনালীর মাঝে সেফটিপিনটি আটকে ছিল৷ বের করা ছিল রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং৷ বীরভূমের ময়ুরেশ্বরের মৌমিতার প্রাঁণ বাঁচালেন সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ শুভেন্দু ভট্টাচার্য৷ তিনি জানিয়েছেন, সাধারণত সেফটিপিন যদি বন্ধ অবস্থায় গলায় আটকে যায়, তাহলে অস্ত্রোপচার করে সহজেই বের করা যায়৷ কিন্তু এক্ষেত্রে গলায় আটকে যাওয়ার পর সেফটিপিন খুলে গিয়েছিল৷ সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার শোভন দে বলেন, "সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে এমন অস্ত্রোপচার করার পরিকাঠামো আছে। চিকিৎসকরা সক্রিয় হলে সাধারণ মানুষ আরও ভাল পরিষেবা পাবেন।"
 
ময়ূরেশ্বরের কুণ্ডলা পঞ্চায়েতের গুমতা গ্রাম। শনিবার বিকালে পুতুল নিয়ে খেলতে গিয়ে অসাবধানতাবশত সেফটিপিন গলায় চলে যায় মৌমিতার৷ শ্বাসনালী ও খাদ্যনালীর মাঝে আটকে যায় সেফটিফিনটি৷ প্রথমে মৌমিতার গলা থেকে সেফটিপিন বের করার চেষ্টা করেন বাড়ির লোকেরাই৷ কাজ না হওয়ায় শিশুটিকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় সাঁইথিয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। পরে স্থানান্তরিত করা হয় সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে৷ সিউড়ি হাসপাতালও হাল ছেড়ে দিয়ে পত্রপাঠ দশ বছরের মেয়েটিকে ঘুরিয়ে দেয় বর্ধমানের দিকে। কিন্তু দিনমজুরি করে সংসার চলে৷ মেয়েকে বর্ধমানে নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই পরিবারের৷ তখনই এগিয়ে আসেন সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নাক-কান-গলার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শুভেন্দু ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, "সমস্যা দাঁড়াল সেফটিপিনটির খোলা অবস্থান নিয়ে। এমন জায়গায় সেটি আটকে ছিল যে, পিছন দিকে ঠেলে বের করতে গেলে খাদ্যনালি বা শ্বাসনালিতে ঢুকে যেতে পারে। আবার দশ বছরের মেয়েকে অজ্ঞান করাও বেশ কঠিন।" শেষ পর্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে রবিবার  রাত ১২টা নাগাদ মৌমিতাকে ওটিতে ঢোকানো হয়। তাকে সাময়িকভাবে অজ্ঞান করেন অ্যানাস্থেসিস্ট দেবজ্যোতি চক্রবর্তী।

সেফটিপিনটি যাতে শ্বাসনালি বা খাদ্যনালিতে না যায়, সেজন্য মৌমিতার গলায় একটা গজ ভরে দেন শুভেন্দুবাবু। তিনি জানিয়েছেন, "সেফটিপিনকে সামনের দিকে টানতে গেলে সেটি গেঁথে যাবে। আমার নিজের ব্যক্তিগত এন্ডোস্ক্রপ দিয়ে দেখে 'ম্যাজোফেরিন' দিয়ে নাক ও গলার মাঝ বরাবর নামাতে পারলাম।"এ ধরনের সাহসী অপারেশনে মান বাড়ল সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের।

তাঁদের মেয়ে সুস্থ করে দিয়েছেন৷ বলা ভাল, জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন৷ চিকিৎসক শুভেন্দু ভট্টাচার্যকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই মৌমিতার বাবা-মায়ের৷ তাঁদের একটাই কথা, "ছোট থেকে জেনেছি, যার কেউ নেই তাঁর ভগবান আছে। ভগবানের দর্শন পেলাম।"