১ ইঞ্চির স্টিকারের সূত্র ধরেই খুলল পার্থ খুনের রহস্য


এক ইঞ্চির একটি স্টিকার। সেই সূত্রেই ডোমজুড়ের ব্যাঙ্ককর্মী পার্থ চক্রবর্তী খুনের রহস্য উন্মোচন হল।

শুক্রবার বিকেলে ডোমজুড়ের কাটলিয়ার বাসিন্দা, পেশায় দর্জি বছর ছাব্বিশের শেখ সামসুদ্দিনকে আটক করেছিলেন তদন্তকারীরা। তাকে জেরা করে এবং সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ওই রাতে অঙ্কুরহাটিতে মুম্বই রোডের ধার থেকে প্লাস্টিকে মোড়া অবস্থায় পার্থের কাটা মুণ্ড, দু'টি হাত এবং হাঁটুর নীচ থেকে কাটা দু'টি পা উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। খুন এবং দেহ পাচারে সাহায্য করার অভিযোগে শনিবার গ্রেফতার করা হয় সামসুদ্দিনের বাবা মনসুর আলিকেও। তাদের বাড়ি থেকে মিলেছে পার্থের কাছ থেকে খোয়া যাওয়া ব্যাঙ্কের ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকাও।

কিন্তু সামসুদ্দিনের খোঁজ মিলল কী ভাবে? এখানেই আসছে স্টিকারের কথা। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার বিকেলে রাঘবপুর থেকে পার্থের দেহের যে অংশটি উদ্ধার করা হয়, তা মোড়া ছিল প্লাস্টিকে। ভিতরে ছিল অসংখ্য কাপড়ের টুকরোও। তারই একটিতে মেলে কলকাতার একটি পোশাক সংস্থার স্টিকারটি। ওই সংস্থা সামসুদ্দিনকে জামা তৈরির বরাত দিত। সামসুদ্দিনের নাম পাওয়ার পরে পার্থ সলপে যে বেসরকারি ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন, সেখানে খোঁজ করেন তদন্তকারীরা। তাঁরা জানতে পারেন, স্ত্রী রোজিনা বিবির নামে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছে সামসুদ্দিন। সেই টাকা সে নিয়মিত শোধ করত না।

তদন্তকারীরা জানান, জেরায় শুক্রবার রাতের দিকে অপরাধ কবুল করে সামসুদ্দিন। জেরায় সে জানায়, বুধবার তার বাড়িতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে পার্থর বৈঠকের কথা ছিল। দুপুরে বৈঠকের নির্ধারিত সময়ের আগেই সে পার্থকে নিজের মোটরবাইকে চাপিয়ে নিয়ে আসে। প্রায় লুকিয়ে তাঁকে নিজের ঘরে ঢোকায়। সে এখন ঋণ মেটাতে পারবে না বলায় পার্থ রেগে যান। দু'জনের বচসা হয়। আচমকাই সে দরজার খিল দিয়ে পার্থের মাথায় মারে। তিনি লুটিয়ে পড়েন। সামসুদ্দিনের থেকে তদন্তকারীরা জেনেছেন, সেই সময়ে তার বাড়ির শেষ প্রান্তের অন্য একটি ঘরে বৈঠকের জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ২৫ জন মহিলা উপস্থিত ছিলেন। পার্থ মারা গিয়েছে ধরে নিয়ে সামসুদ্দিন নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ওই মহিলাদের বলে দেয়, এ দিন আর বৈঠক হবে না। মহিলারা চলে গেলে এর পরে একটি কুড়ুল দিয়ে সামসুদ্দিন দেহটি ছয় টুকরো করে দু'টি প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে। দু'দফায় প্যাকেটগুলি মোটরবাইকে করে নিয়ে গিয়ে সে ফেলে আসে। পুলিশ অবশ্য শনিবার বিকেল পর্যন্ত সামসুদ্দিনের মোটরবাইক, পার্থের সাইকেল এবং মোবাইলের খোঁজ পায়নি। মেলেনি খুনে ব্যবহৃত কুড়ুলটিও। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা জানান, তল্লাশি চলছে।

সামসুদ্দিনের স্ত্রী এবং মা-বৌদি খুনের কথা কিছু জানতেন না বলে দাবি করেছেন। পড়শিরা ওই বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখানোয় এ দিন পুলিশ প্রহরা বসানো হয়। রোজিনাদের পুলিশ উদ্ধার করে থানায় এনে রাখে। এ দিন থানায় আসেন পার্থের মামা তাপস চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ''এই রহস্যভেদ করতে পুলিশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।''